০৪:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

কিশোরগঞ্জে চাঁড়ালকাঁটা নদীর বালু লুটের মহোৎসব কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁড়ালকাঁটা নদীর পুর্নখননের স্তুুপকৃত বালু হরিলুটের মহোৎসব চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দরপত্র আহবানে গাফিলতি ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারনে দিনে রাতে সমানতালে হাজার হাজার ট্রলি বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বালুখেকোরা। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চাঁড়ালকাঁটা নদীর ২৫ কিলোমিটার অংশ খননের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ঠিকাদার বোমা মেশিন দিয়ে নদী খনন করে নদী থেকে উত্তোলন করা বালু নদীর তীর সংলগ্ন একাধিক স্থানে স্তুপ করে রাখে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী খননকৃত এসব বাবু বিক্রির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করে টেন্ডার আহবান করবে। টেন্ডারের মাধ্যমে যে সকল ঠিকাদারগন বালু বিক্রির অনুমতি পাবে তারা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এসব বালু পরিবহন করে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু নদী খননের ৬ থেকে ৭ বছর পেড়িয়ে গেলেও সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নীলফামারী জেলা প্রশাসন থেকে কোন ধরনের টেন্ডার আহবান কিংবা ইজারা প্রদান করা হয়নি। সরকারী এসব বালু দিনে ও রাতের বেলা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতরা। ফলে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অপর দিকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বালু ব্যাবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের নামা ফুলবাড়ি, নিতাই মুশরুত পানিয়াল পুকুর বেলতলি বাজার, নিতাই পাগলার বাজার, কালুরঘাট ব্রীজ, বাহাগিলি ইউনিয়নের, উত্তর দুরাকুটি ময়নাকুটি সামসুল চেয়ারম্যানের ঘাট, বাহাগিলি ডাংগাপাড়া, বাহাগিলি স্টিল ব্রীজের নিচে, বাহাগিলি আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা, পুটিমারী লাল জুম্মারপাড়া, খেতুর বাজারের পুর্বদিক, শালটিবাড়ি, চাঁদখানা ইউনিয়নের, সারোভাষা, সারোভাষা ব্রীজের নিচে, চাঁদখানা চন্ডির রাজারের পশিমদিকে সহ ৩০ থেকে ৪০ টি পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ট্রলি বালু নিয়ে যাচ্ছে বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতরা।

নিতাই ইউনিয়নের নামা ফুলবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নামা ফুলবাড়ি গুচ্ছগ্রামের পাশেই তিনটি বালুর স্তুপ ছিল। এলাকাবাসী জানায় ওই তিনটি স্তুপে কমপক্ষে এক কোটি টাকার বালু মজুদ ছিল। স্থানীয় এক বালু সিন্ডিকেটের সদস্য গত চার বছর ধরে ওই বালু পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে একশো থেকে দুইশ ট্রলি বালু নিয়ে যায় সিন্ডিকেটটি। স্থানীয়রা জানায়, এক ট্রলি বালুর দাম বর্তমানে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন ওই বালু ব্যাবসায়ী তিন থেকে চার লক্ষ টাকা আয় করছে।

পুটিমারী ইউনিয়নের খেতুর বাজারের পশ্চিম পার্শে চাঁড়াল নদীর সীমানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে নদীর খননকৃত বালুর স্তুপ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে নদীর চড় কেঁটে বিক্রি করছে ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা। কেউ বাঁধা দিতে গেলে বা ছবি তুললে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাঁদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত ) মোঃ মাহামুদুল হাসান বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা অংশের চাঁড়ালকাঁটা নদীর খননকৃত বালু ইজারা নেয়ার জন্য কয়েকটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা পড়েছে। সেগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে আসলে আমরা সার্ভে করে বালু পরিমান নির্ধারন করে ইজারার মুল্য নির্ধারন করে দেব। তাঁরপর সেগুলো ইজারা প্রদান করা হবে। ইজারা প্রদানের আগেই সবগুলো পয়েন্ট থেকে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বালুখেকোরা। বালু লুটের বিষয়ে কি ব্যাবস্থা গ্রহন করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বালু লুটের বিষয়ে আমাদের করার কিছুই নেই। যা করার তা উপজেলা প্রশাসন করবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, চাঁড়ালকাাঁটা নদীর খননকৃত বালু লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে ভ্যাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জড়িমানা করা হয়েছে। বালু লুটের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নীলফামারীতে আগুন টিমের সদস্য গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জে চাঁড়ালকাঁটা নদীর বালু লুটের মহোৎসব কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত ১২:১৮:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁড়ালকাঁটা নদীর পুর্নখননের স্তুুপকৃত বালু হরিলুটের মহোৎসব চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দরপত্র আহবানে গাফিলতি ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী না থাকার কারনে দিনে রাতে সমানতালে হাজার হাজার ট্রলি বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বালুখেকোরা। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চাঁড়ালকাঁটা নদীর ২৫ কিলোমিটার অংশ খননের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ঠিকাদার বোমা মেশিন দিয়ে নদী খনন করে নদী থেকে উত্তোলন করা বালু নদীর তীর সংলগ্ন একাধিক স্থানে স্তুপ করে রাখে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী খননকৃত এসব বাবু বিক্রির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বয় করে টেন্ডার আহবান করবে। টেন্ডারের মাধ্যমে যে সকল ঠিকাদারগন বালু বিক্রির অনুমতি পাবে তারা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে এসব বালু পরিবহন করে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু নদী খননের ৬ থেকে ৭ বছর পেড়িয়ে গেলেও সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও নীলফামারী জেলা প্রশাসন থেকে কোন ধরনের টেন্ডার আহবান কিংবা ইজারা প্রদান করা হয়নি। সরকারী এসব বালু দিনে ও রাতের বেলা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতরা। ফলে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অপর দিকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন বালু ব্যাবসায়ীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের নামা ফুলবাড়ি, নিতাই মুশরুত পানিয়াল পুকুর বেলতলি বাজার, নিতাই পাগলার বাজার, কালুরঘাট ব্রীজ, বাহাগিলি ইউনিয়নের, উত্তর দুরাকুটি ময়নাকুটি সামসুল চেয়ারম্যানের ঘাট, বাহাগিলি ডাংগাপাড়া, বাহাগিলি স্টিল ব্রীজের নিচে, বাহাগিলি আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা, পুটিমারী লাল জুম্মারপাড়া, খেতুর বাজারের পুর্বদিক, শালটিবাড়ি, চাঁদখানা ইউনিয়নের, সারোভাষা, সারোভাষা ব্রীজের নিচে, চাঁদখানা চন্ডির রাজারের পশিমদিকে সহ ৩০ থেকে ৪০ টি পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ট্রলি বালু নিয়ে যাচ্ছে বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতরা।

নিতাই ইউনিয়নের নামা ফুলবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নামা ফুলবাড়ি গুচ্ছগ্রামের পাশেই তিনটি বালুর স্তুপ ছিল। এলাকাবাসী জানায় ওই তিনটি স্তুপে কমপক্ষে এক কোটি টাকার বালু মজুদ ছিল। স্থানীয় এক বালু সিন্ডিকেটের সদস্য গত চার বছর ধরে ওই বালু পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে রাত পর্যন্ত কমপক্ষে একশো থেকে দুইশ ট্রলি বালু নিয়ে যায় সিন্ডিকেটটি। স্থানীয়রা জানায়, এক ট্রলি বালুর দাম বর্তমানে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন ওই বালু ব্যাবসায়ী তিন থেকে চার লক্ষ টাকা আয় করছে।

পুটিমারী ইউনিয়নের খেতুর বাজারের পশ্চিম পার্শে চাঁড়াল নদীর সীমানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে নদীর খননকৃত বালুর স্তুপ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে নদীর চড় কেঁটে বিক্রি করছে ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা। কেউ বাঁধা দিতে গেলে বা ছবি তুললে বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাঁদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে।

সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত ) মোঃ মাহামুদুল হাসান বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা অংশের চাঁড়ালকাঁটা নদীর খননকৃত বালু ইজারা নেয়ার জন্য কয়েকটি আবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জমা পড়েছে। সেগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে আসলে আমরা সার্ভে করে বালু পরিমান নির্ধারন করে ইজারার মুল্য নির্ধারন করে দেব। তাঁরপর সেগুলো ইজারা প্রদান করা হবে। ইজারা প্রদানের আগেই সবগুলো পয়েন্ট থেকে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে বালুখেকোরা। বালু লুটের বিষয়ে কি ব্যাবস্থা গ্রহন করছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বালু লুটের বিষয়ে আমাদের করার কিছুই নেই। যা করার তা উপজেলা প্রশাসন করবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, চাঁড়ালকাাঁটা নদীর খননকৃত বালু লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে ভ্যাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জড়িমানা করা হয়েছে। বালু লুটের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।