কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তিস্তা ব্যারাজের উজানে আটকে থাকা পানি ছেড়ে দিয়ে তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, আগামী ৩০ ও ৩১ মে ভারত গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দিতে পারে। কারণ ২৯ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত ভারতের আসাম রাজ্যের ওপর ৫০০-৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম ব্যবস্থা না নিলে তিস্তাপাড়ের চর ও চরাঞ্চলের মানুষ ভয়াবহ বন্যার শিকার হতে পারে। এ বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
রবিবার রাতে তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে এ সতর্কতা জানান। ওই পোস্টে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের একটি ছবিও যুক্ত করেন। তিনি লেখেন, গণমাধ্যমকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে অনুরোধ করছি, যেন আগামী ২৯ মের মধ্যে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত তিস্ত ব্যারাজের উজানে আটকে রাখা পানি ছেড়ে দিয়ে তা সর্বনি¤œ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। কারণ ২৯ থেকে ৩১ মে এবং ১ জুন ভারতের আসাম রাজ্যে ৫০০-৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, ভারতের গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দিতে হতে পারেÑ যার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশের বেশি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভারত পানি ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের তিস্তায় ভয়াবহ ঢল নামতে পারে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা নদীর পানি পরিমাপক অপারেটর নুরুল ইসলাম বলেন, তিনদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি অনেকটা শুকিয়ে গেছে। গত ১৫ মে থেকে ভারতের দো-মহনী পয়েন্ট থেকে পানির তথ্য আদান-প্রদান শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা, দুপুর ১২টা ও বিকেল ৫টায় সরাসরি বার্তা বিনিময় হয়।
সবশেষ তথ্যমতে, ভারতের গজলডোবা ও দো-মহনী পয়েন্টে পানির লেভেল অনেক নিচে রয়েছে। ফলে, বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজেও পানির প্রবাহ অনেক কমে গেছে। তিনি আরও জানান, আমাদের তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট (গেট) গত সাতদিন ধরেই খোলা রয়েছে। এখন আর তা বন্ধ করা হচ্ছে না। আগাম বর্ষায় হঠাৎ করে যে কোনো সময় পানির প্রবাহ বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশের সতর্কবার্তা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আমরা ইতোমধ্যে সতর্কতা পেয়েছি এবং বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীর সঙ্গে আসাম রাজ্যের সরাসরি সংযোগ না থাকলেও সিকিম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, সেবক, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার হয়ে এর প্রবাহ বাংলাদেশে আসে। আসাম রাজ্যের ওপর ভারি বৃষ্টি হলে তার প্রভাব সিকিম ও তিব্বতের দিকে গিয়ে তিস্তায় এসে পড়তে পারে। এ ছাড়া, আসামের বৃষ্টির পানি ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে কুড়িগ্রাম অঞ্চলে ঢল নামতে পারে।