নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক ধীরগতির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পাঠদান ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি শিশুরা খেলাধুলা করার ক্ষেত্রে দুরাবস্থার শিকার। নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হতে চললেও কাজের ২০ ভাগও শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে কাজ ফেলে রাখায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দুঃসহ দুর্ভোগে পড়েছেন। ঠিকাদারের অবহেলার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় দিন দিন সমস্যা আরও বাড়ছে। এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সৈয়দপুর উপজেলার ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের বরাদ্দ দেয়া হয়। এর ভিত্তিতে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর কার্যাদেশ পায় ঠিকাদাররা। এর প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয়গুলোর পুরাতন ভবনগুলো অকশনের মাধ্যমে বিক্রি ও ভেঙ্গে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর এই কাজ শেষ হওয়ার কথা। কাজগুলো পায় ঠাকুরগাওয়ের ৪ জন ও সৈয়দপুরের ৩ জন ঠিকাদার। মুলতঃ আওয়ামীলীগ সরকারের দোসর ঠিকাদাররা এই কাজগুলো বাগিয়ে নেয় এবং সেই প্রভাবেই সময়মত কাজ না করার মত দাপট দেখিয়েছে। ফলে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার উপক্রম হলেও ২০ ভাগ কাজও হয়নি।
বিশেষ করে স্থানীয় আওয়ামীলীগ দলীয় ঠিকাদারদের অধীনে ৩ টি বিদ্যালয়ের দুরাবস্থা। এগুলো হলো সৈয়দপুর শহরের নিয়ামতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষণপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলগুলোর কাজ প্রায় ৬ মাস থেকেই সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। নানা অজুহাতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ বন্ধ রাখায় চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। শিক্ষকরা যেমন পাঠদান করতে সমস্যায় পড়েছেন তেমনি শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষ সংকটে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তারা কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে ১ সেপ্টেম্বর (রোববার) বেলা ১২ টায় নিয়ামতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, সেখানে শুধু নিচের কলাম করা হয়েছে। এসময় ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা শিবলী বেগম বলেন, প্রায় বছর হতে গেলো নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। শুধু বেস কলাম করার পর ৬ মাস হলো কোন কাজ করছেনা ঠিকাদার। বার বার বলা সত্বেও কোন ভ্রুক্ষেপ নাই তাদের। ফলে শ্রেণীকক্ষের অভাবে এই দীর্ঘদিন থেকে দুই শিপটে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা তাদের উপযোগী পরিবেশ থেকে ব্িঞ্চত হচ্ছে। খেলাধুলা করাতো দুরের কথা পাঠদানই ঠিকমত সম্পন্ন করা যাচ্ছেনা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাকির হোসেন সরকার বলেন, ভবন নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও কেন যে কাজ বন্ধ রয়েছে তা জানিনা। এই অবস্থা আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করবে। তিনি দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী এস এম আলী রাজু বলেন, বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় না পাওয়ায় মূলতঃ কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে ঠাকুরগাওয়ের ঠিকাদাররা যে ৪টি স্কুলের কাজ করছেন তাদের কাজের গতি স্বাভাবিক রয়েছে। সৈয়দপুরের ঠিকাদারদের কাজ স্থগিত হয়ে আছে। তাদের তাগাদা দেয়া হয়েছে। অচিরেই কাছ শুরু করবে বলে তারা কথা দিয়েছেন। কিন্তু মেয়াদের মধ্যে ভবনগুলোর কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবেনা বলে তিনি স্বীকার করেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের যে ভোগান্তি হচ্ছে তা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে তিনি নিরবতা পালন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সামর্থ্য না থাকার পরও বড় অংকের এই কাজ বাগিয়ে নিয়েছে স্থানীয় ৩ জন ঠিকাদার। এরমধ্যে ঠিকাদার রাজ সৈয়দপুর পৌর আওয়ামীলীগের ৮ নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারী, মুকুল কামারপুকুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আর মকসুদুল ইসলাম সরকার খাতামধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন সরকারের ভাই। তারা কাজ নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমত চলছে। অর্থ সংকটের কারণে তারা সঠিক সময়ে কাজ সম্পাদন করতে পারছেনা। কারণ তাদের এমন বড় কাজ করার মত সামথ্যই নাই। সেটাকে নানা অজুহাতে এবং দলীয় দাপটে ঢেকে রেখে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। আর এ ক্ষেত্রে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এমন সুবিধা দিয়ে চলেছেন উপজেলা প্রকৌশলী। তার সহায়তায় এই ৩ ঠিকাদার অধিকাংশ কাজ পান এবং বহিরাগত ঠিকাদাররা কাজ পেলেও তা স্থানীয় ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয়।
এস আর সাপ্লায়ার নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রাজা বলেন, মূলতঃ ফান্ড সমস্যার কারণে কাজ স্থগিত ছিল। আর বর্ষার কারণে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিলনা। তবে ২-১ দিনের মধ্যে আবার কাজ শুরু করা হবে। ঠাকুরগাওয়ের ঠিকাদাররা কাজ অব্যাহত রাখলেও আপনারা বলছেন ফান্ড সমস্যার কথা। এই ফান্ড সমস্যা কি আপনাদের প্রতিষ্ঠানের না উপজেলা প্রকৌশলের? এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।