নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং ২০২০ সালে জো বাইডেন যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান সিনথিয়া ম্যাককিনি।
রাশিয়ার মস্কোতে ‘এক টাকার খবর’-এর প্রধান সম্পাদক মুন্নী সাহার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন সিনথিয়া ম্যাককিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের কারচুপি ও জালিয়াতির সমালোচনা করে সিনথিয়া বলেন, ‘সত্য যেমন শক্তিশালী, তেমনি আমার উপরে যে আঘাত আসবে, তা-ও খুব শক্তিশালী’।
পর্যবেক্ষক দলের প্রধান বলেন, ‘তারপর যখন ট্রাম্প এসেছে এবং এই জালিয়াতি সম্পর্কে বলেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এই সম্পর্কে জেনেছে। এটা শুধু আমি নই, অনেকেই বলেছেন যে এই সিস্টেমে কারচুপি হয়। তারপর ট্রাম্প ২০২০ সালে নির্বাচনে জিতেছেন, তিনি তরুণদের আকৃষ্ট করেছেন, তরুণরাও তাকে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু সেখানেও কিছু জালিয়াতি ছিল। আমি কংগ্রেসে জো বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারণার সময়ও কাজ করেছি। তিনিও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট হননি, জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছেন।’
সিনথিয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ফ্লোরিডায় আটকে গিয়েছিল। ফ্লোরিডার ফলাফলের ওপর সিদ্ধান্ত হচ্ছিল বুশ অথবা আল গোর হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন। নানা নাটকীয়তার পর বুশ হোয়াইট হাউজে যান।’
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে সিনথিয়া বলেন, ‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের এখান থেকে শেখার আছে। রাশিয়া জাদুর মতো কাজ করেছে। তাদের জনগণের ভোট দিতে কোনও ভোগান্তি বা সময় লাগেনি। জনগণ তাদের ব্যবহৃত ডিভাইসের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। আমি মনে করি এটাই হওয়া উচিত।’
ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা যখন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ভোট দিই, তখন কারচুপি, জাল ভোটসহ অনেক কিছু ঘটে ডিভাইসের মধ্যে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো। তাহলে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন যে রাশিয়ার নির্বাচনে কোনও কারচুপি বা জাল-জালিয়াতি হয়নি?’
জনগণের নেতা সম্পর্কে সিনথিয়ার মতামত কী, জানতে চাইলে সিনথিয়া বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাবেজ জনগণের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। যিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ শাসন করেছেন। পশ্চিমাদের নিরন্তর চাপ আর বিরোধীদের টালবাহানাও সামান্য টলাতে পারেনি তাকে। কারণ তার কাছে জনগণের ভালোবাসা ছিল, জনপ্রিয়তা ছিল এবং তিনি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। তিনি ক্যানসারে মারা গিয়েছিলেন। আমি তার শেষকৃত্যে ছিলাম। আমি দেখেছি, লাখ লাখ মানুষ কান্না করেছিল তার জন্য। আমি বিশ্বাস করি যদি একজন নেতা তার জনগণকে ভালোবাসেন, তাহলে জনগণও তাকে ভালোবাসবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যদি আপনি নিজেকে জনগণের কাছে নিয়ে যান, আপনি অবশ্যই জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। এ জন্য আপনাকে আর কারচুপি বা দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হবে না। আপনি তাদের কাছ থেকে পুরস্কৃত হবেন, যারা আপনাকে ভালোবাসে।’