শনিবার , ২১ অক্টোবর ২০২৩ | ৬ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. ই-পেপার
  7. কৃষি
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. জাতীয়
  11. জীবনযাপন
  12. ধর্ম
  13. প্রযুক্তি
  14. বাংলাদেশ
  15. বিনোদন

দুর্গা পূজা হোক সাত্ত্বিক, অপসংস্কৃতি মুক্ত

প্রতিবেদক
বার্তা প্রতিবেদক
অক্টোবর ২১, ২০২৩ ৫:০০ পূর্বাহ্ণ

বছর ঘুরে আবারও আসছে দেবী দূর্গার আরাধনার শুভক্ষণ। প্রতিবারই বহুল প্রতিক্ষার পর দুর্গাপূজা নিয়ে আসে শান্তির বারতা; সম্প্রীতির বন্ধনে সবাইকে আবদ্ধ করবার প্রয়াসে। সচরাচর দুর্গোৎসবের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মহিমা কারও অজানা নয়। তাই চলতি লেখাটিতে পূজায় সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে চলে আসা দৃষ্টিকটু বিষয়গুলো তুলে ধরবার পাশাপাশি কিছু গঠনমূলক প্রস্তাবণা নজরে আনা সময়োপযোগী মনে করছি।

ধারাবাহিকভাবে বলতে গেলে প্রথমেই আসে দেবী দুর্গার প্রতিমা প্রসঙ্গ। খুব স্বাভাবিকভাবেই পূর্বের তুলনায় দেবীর প্রতিমায় ভিন্নতা আসছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এমন পরিবর্তন গ্রহনযোগ্যতা পেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে না- এমন দাবী করতে পারি না আমরা। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সরস্বতী, লক্ষীসহ অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমায় অতিমাত্রায় আধুনিকতা শালীনতাতে পাশ কাটিয়ে গেছে কোথাও কোথাও। সিনেমার নায়িকা/ মডেলদের আদলে দেবী প্রতিমার রূপ দিতে গিয়ে আমরা ধর্মকে হাসির বস্তুতে পরিণত করছি না তো আবার?

বিগত কয়েক বছরে দুর্গোৎসবে আমরা প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জ্বায় তুলনামূলক বেশি ব্যয় করার রীতি লক্ষ্য করে আসছি। ডেকোরেশন ও আলোকসজ্জ্বায় ম-পে-ম-পে সেরা হবার প্রতিযোগিতা তো আছেই। এর সাথে যুক্ত হয় মাত্রাতিরিক্ত সাউন্ড সিস্টেমের ডিজে গান। মন্ডপগুলোতে আগের মতো আর ধর্মীয় গান, চন্ডীপাঠ ও কীর্ত্তন বাজানো কমেই গেছে বলা চলে। কিসব অশ্লীল, অশ্রাব্য ধাঁচের গান বাজানো হয় যা হয়তো বিনোদনমূখী, কিন্তু অপসংস্কৃতির উপাদান বললেও ভুল হবে না। গানগুলোর অর্থ, সুর, তাল, লয় এর কোনটারই সমন্বয় নেই, শুধু কর্কস শব্দ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্দিরগুলোতে এতবেশি উচ্চশব্দে ডিজে গান বাজানো হয় তাতে করে দর্শনার্থী বা ভক্তদের প্রতিমা দর্শনই দায় হয়ে দাঁড়ায়। আরেকটি পীড়াদায়ক বিষয় হলো: পূজায় কোথাও কোথাও মাদক সেবন করে চলে উত্তাল নৃত্য। যা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে সনাতন ধর্ম সমন্ধে নেতিবাচক ধারণা পৌছে দেয়। ছোট করে দেয় আমাদের আরাধনা পদ্ধতিকে। বিনোদন বিকৃতভাবেই কেন নিতে হবে? ভালো অনেক উপায়ই তো রয়েছে। এভাবে কি আমরা ভাবতে পারি না?

উৎসবের আনন্দে মেতে উঠতে ডেকোরেশন, আলোকসজ্জ্বা, সাউন্ড সিস্টেমের বিপক্ষে আমি নই, কিন্তু স্বাভাবিক মাত্রাকে ছাপিয়ে যাওয়ার বিপক্ষেই মূলতঃ আমার অবস্থান। পূর্বোক্ত বিষয়গুলো মাত্রার মধ্যে রেখেও কিন্তু আনন্দ করা সম্ভব এবং সেটিই সমাজের সবার চোখে মানানসই। পক্ষান্তরে আমরা এর বিপরীতে যতই যেতে থাকবো ঠিক ততই বিরক্তির কারণ হবো। ক্ষুন্ন হবে সনাতন ধর্মের গৌরবময় সম্মান। স্বধর্মের বিকৃত উপস্থাপনার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী থাকবো।

আমরা আবার ফিরে যেতে পারি পূর্বের মতো সুস্থ পূজার্চনার সংস্কৃতিতে। ধুনুচি আরতি, শঙ্খধ্বনি, গীতাপাঠ, চন্ডীপাঠ, ধর্মীয় কুইজ প্রতিযোগিতা ও ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। কয়েক বছর আগেও কিন্তু এমন সুস্থ্য সংস্কৃতি সনাতনীদের মধ্যে ব্যপকভাবে চলমান ছিলো, এখনও সারাদেশের অনেক জায়গাতেই চলে। ধুমপান, মদ্যপান, নেশাদ্রব্য গ্রহণ, তাস খেলাসহ সর্বপ্রকার বাজে ব্যবহার মুক্ত করতে হবে পবিত্র পূজা ম-প। পাশে থাকা অন্য পূজা ম-পের সঙ্গে কোনও প্রকার প্রতিযোগিতা করা হতে বিরত থাকতে হবে। পূজার প্যান্ডেল, আলোকসজ্জ্বা, সাউন্ড সিস্টেমের বাজেট কমিয়ে তা দিয়ে দুঃস্থদের মাঝে পূজা সামগ্রী (নারিকেল, মুড়ি, চিড়া, গুড়, চিনি ইত্যাদি), বস্ত্রদান, মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনার মতো অনেক জনকল্যাণমূখী কর্মসূচি।

পরবর্র্তী প্রজন্মের নিকট ধর্মজ্ঞান, শিক্ষা, সনাতনী রীতি ও সঠিক ইতিহাস পৌঁছাতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্ব। অন্যথায় তারা অনাচারকেই আচার হিসেবে আত্মস্থ করবে। খেয়াল রাখতে হবে পূজা দেখা ও মনোরঞ্জনই যাতে মূল উদ্দেশ্য বণে না যায়। আমরা অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে মুক্ত করে পূজাকে করতে চাই শুদ্ধ ও সাত্ত্বিক। তরুন ও যুব সমাজকে বিপথে যেতে দেখলে মনটা আশঙ্কার মেঘে ঢাকা পরে। আমরা সেই অপসংস্কৃতির মেঘের ভয়কে জয় করতে চাই। ধর্মকে সমুন্নত রেখেই আমরা এগিয়ে চলবো সমৃদ্ধির রথে, সম্প্রীতির পথে। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

সর্বশেষ - নীলফামারী