
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৫ (সাকিব ৩২, আফিফ ৪; শামীম ১১, মুশফিক ২৫, শান্ত ১০৪, মিরাজ ১১২* রি/হা, তাওহীদ হৃদয় ০, মোহাম্মদ নাঈম ২৮)
মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য ইনিংসে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে করলো ৩৩৪ রান। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই চলবে না, রান রেটেও এগিয়ে থাকতে হবে। সেই বিবেচনায় বোলারদের সামনের বড় চ্যালেঞ্জ। আফগানদের বড় ব্যবধানে হারাতে এবার সাকিব-তাসকিনদের বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
লাহোরে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনিংয়ে মিরাজ ও মোহাম্মদ নাঈম ৬০ রানের জুটি গড়েন। নাঈম ২৮ রানে বিদায় নেওয়ার পর তাওহীদ হৃদয় ডাক মারেন। তারপরই জুটি গড়েন শান্ত ও মিরাজ। দুজনে শতরানের জুটি গড়ার পথে হাফ সেঞ্চুরি করেন। সেটাকে সেঞ্চুরি নিতে দেরি করেননি। মিরাজ ১১৫ বলে আর শান্ত ১০১ বলে সেঞ্চুরি করেন। অবশ্য দুজনেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাঠ ছাড়েন। মিরাজ ১১২ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন। শান্ত পা পিছলে রান আউট হন ১০৪ রান করে। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিম ১৫ বলে ২৫ রান ও সাকিব ১৮ বলে ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহ তিনশ পার করেন। সাকিব অপরাজিত ছিলেন।
সাকিব আল হাসানের শট এক্সট্রা কভারে। নন স্ট্রাইক থেকে আগেভাগে বেরিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। তাকে ফিরে যেতে বলেন সাকিব। ততক্ষণে ক্রিজের মাঝপথে মুশফিক। তিনি ফেরার আগেই গুলবাদিন নাইব ভেঙে দেন স্টাম্প। ১৫ বলে ২৫ রানে থামেন উইকেটকিপার ব্যাটার।
মেহেদী হাসান মিরাজ রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত পেয়ে গেলেন সেঞ্চুরি। ১০১ বলে দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ৪৩তম ওভারের চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান বাঁহাতি ব্যাটার। কিছুক্ষণ পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন তিনি। ১০৪ রানে থামেন শান্ত। ১০৫ বলের ইনিংসে ছিল ৯ চার ও ২ ছয়।
৪৫তম ওভারে মুজিবের বল সুইপ করেন শান্ত। সিঙ্গেল নিতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারেন বল পয়েন্টে ফিল্ডারের হাতে। ফিরতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান। ততক্ষণে নাজিবউল্লাহ জাদরানের থ্রোতে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ভেঙে দেন স্টাম্প। রান আউট হন শান্ত।
ওয়ানডেতে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নেমে দারুণ এক ইনিংস খেললেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১১৫ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন তিনি। গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম শতক হাঁকান। ৪১তম ওভারে গুলবাদিন নাইবকে সিঙ্গেল মেরে সেঞ্চুরি উযদযাপন করেন ডানহাতি ব্যাটার। ৪৩তম ওভারে মুজিব উর রহমানকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাঁ হাতের আঙুলে আঘাত পান তিনি। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। ১১৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছয়ে ১১২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন, লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করলেন ছক্কা মেরে। এশিয়া কাপে নাজমুল হোসেন শান্ত আছেন দুরন্ত ফর্মে। ৩১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ছয় মারেন তিনি। তাতে ৫৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি হয়ে যায়, এই ইনিংসে ছয়টি চারও ছিল তার।এরই মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে তার জুটি একশ ছাড়িয়ে গেছে।
মেক শিফট ওপেনার হিসেবে এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেই বাজিমাত করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুতে ধীরস্থির থাকলেও পরে আস্তে ধীরে হাত খোলা শুরু করেছেন। তাতে ২৩.১ ওভারে পেয়ে গেছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। ৬৫ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন তিনি।
৬০ রানে নাঈমের আউটের পর দ্রুত ফিরেছেন হৃদয়। তাতে কিছুটা ছন্দপতন হলেও সেটি কাটিয়ে উঠেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনের ব্যাটে ২০তম ওভারেই বাংলাদেশ পূরণ করেছে দলীয় একশ। পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে তাদের জুটি।
আত্মবিশ্বাসী সূচনা ছিল বাংলাদেশের। বিনা উইকেটে পাওয়ার প্লেতেই যোগ হয় ৬০ রান। কিন্তু পাওয়ার প্লের শেষ বলে নাঈম বোল্ড হলে মুহূর্তেই সেই আত্মবিশ্বাসী অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে ব্যাক ফুটে চলে যেতে হয়েছে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে তাওহীদ হৃদয় নামলেও কিছুই করতে পারেননি। গুলবাদিন নাঈবের বলে দারুণ ক্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছেন। তাতে চার বলের ব্যবধানে পড়েছে দ্বিতীয় উইকেট।
প্রথম ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারত দিয়েছিল বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই তারা মাঠে নেমেছে। ওপেনিং অর্ডারে নামানো হয় মিরাজকে। নতুন সঙ্গী পেয়ে নাঈমও যেন হাত খুলে মারার আত্মবিশ্বাস পেলেন। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। মিরাজ শুরুতে খোলসবন্দি থাকলেও পরে হাত খোলা শুরু করেছেন। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই জুটি ভাঙে নাঈমের বিদায়ে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুজিব তাকে দারুণ এক স্পিনে পরাস্ত করেছেন। ৩২ বলে ৫ চারে ২৮ রান করা নাঈম ফিরেছেন বোল্ড হয়ে। ওপেনিং জুটিতে যোগ হয় ৬০ রান।
প্রথম ম্যাচে লিটন-তামিম না থাকায় ওপেনিংয়ে ভালো জুটি পায়নি বাংলাদেশ। এবার নাঈমের সঙ্গে মিরাজকে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নামিয়ে ফলটা হাতে নাতেই মিললো। আট ওভারেই এই জুটি যোগ করেছে ৫০ রান। তাতে সাত ম্যাচ পর ওপেনিং জুটিতে ৫০ দেখলো বাংলাদেশ।
আফগানদের বিপক্ষে আজ এশিয়া কাপে তিনটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। দলে ঢুকেছেন আফিফ হোসেন, হাসান মাহমুদ ও শামীম হোসেন। আগের ম্যাচে অভিষেক করা তানজিদ হাসান, শেখ মেহেদী ও মোস্তাফিজ বাদ পড়েছেন। ব্যাটিং অর্ডারে আজ ওপেনিং করবেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সাকিব বলেছেন তীব্র গরম ও উইকেটের ধরণই এর কারণ। শুরুতে ভালো পুঁজি এনে দেওয়ার লক্ষ্য তাদের। আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ বলেছেন, টস জিতলে তারাও শুরুতে ব্যাট করতেন।
বাংলাদেশ একাদশ: মোহাম্মদ নাঈম, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, শামীম হোসেন, আফিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।
আফগানিস্তান একাদশ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), ইবরাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শাহীদী (অধিনায়ক), নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী, করিম জানাত, গুলবাদিন নাঈব, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ফজল হক ফারুকি।
এশিয়া কাপে বাঁচা-মরার ম্যাচে আজ ‘বি’ গ্রুপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। লাহোরে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
শ্রীলঙ্কার কাছে প্রথম ম্যাচে হতাশাজনক হারের পর বাংলাদেশ এখন ব্যাকফুটে। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৫ উইকেটের হারে সুপার ফোরে ওঠার পথটাই কঠিন হয়ে গেছে! মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বাংলাদেশের টিকে থাকতে হলে আজ রবিবার আফগানদের বিপক্ষে জয়ের কোনও বিকল্প নেই। অপর দিকে এটি আফগানদের আজ প্রথম ম্যাচ।