নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর হতাশ বিএনপি। বৈঠকে কী বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছুই বলছে না বিএনপি। যদিও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক্স হ্যান্ডলে বৈঠক পরবর্তী ছবি প্রকাশ করলেও আলোচনার বিষয়ে কিছু জানায়নি দূতাবাস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি মনে করেছিল তাদের যারা একটু বাতাস দিয়েছিল, তারা ক্ষমতার বসিয়ে দেবে।এখন তাদের মোহভঙ্গ হয়েছে তাই বিএনপি নেতাদের মুখে কুলুপ।
ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বৈঠক করে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর এইলিন লাউবেখার ও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পূর্বাপর রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বিস্তারিত তথ্যসংবলিত একটি ফাইলও প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করেন তারা। এতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার, নানা অনিয়ম ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যদিও বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাননি বিএনপির নেতারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আন্তর্জাতিক উইংয়ের আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, আমরা এসেছি, কথাবার্তা বলেছি। আর কিছু বলার নেই।’ নির্বাচনের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছি কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘কথা হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছু বলতে চাই না। আপনারা যত প্রশ্ন করবেন, আমার উত্তর হচ্ছে– কিছু বলার নেই।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও দেশের এত মানুষের সমর্থন নিয়ে বিএনপি যে জনপ্রিয় দল তা প্রমাণে নির্বাচন ছাড়া অন্য তো কোনো পথ খোলা ছিল না। তাহলে বর্জন করে আন্দোলন করলে লাভ কী? ভোটে অংশগ্রহণ না করলে কেউ তো কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারে না। এখন তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে বিএনপ।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ‘সহিংসতা করে, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না। বিএনপি মনে করেছিল আগুন সন্ত্রাস করে এবং তাদের যারা একটু বাতাস দিয়েছিল, তারা ক্ষমতার বসিয়ে দেবে। বিএনপি বুঝতে পারেনি সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, অনন্তকাল কেউ কারও জন্য বসে থাকবে না। ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে, ভুল রাজনীতির ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এখন তাদের মোহভঙ্গ হয়েছে। তাই বিএনপির মুখে কুলুপ।’