বিশেষপ্রতিবেদক
বিশ্বের অনেক দেশের নারী নেত্রীর শাসনের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন সহ নানান সাফল্যে শেখ হাসিনা অনেকএগিয়ে আছেন। এ সংক্রান্ত একটি তথ্য বহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাপান ভিত্তিক ওয়েবপোর্টালনিকে এশিয়া। সোমবার প্রতিবেদনটি করেছেন তাদের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তরু তাকাহাসি। মূলত তিনি এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পাঁচবারের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি চর্চার গুণগত দিক বিশ্লেষণ করেছেন।
তরু তাকাহাসি এই প্রতিবেদনে লিখেছেন গত ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচনে দুর্দান্ত বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বয়কট করেছিল। ওই নির্বাচন শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ মেয়াদে এবং ব্যক্তিগত পঞ্চম বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদের নারী রাষ্ট্রপ্রধান।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে একদল উচ্ছৃঙ্খল সামরিক কর্মকর্তার হাতে নিহত হন। তরু তাকাহাসি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, সেই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। যিনি ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের দল আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন। সেই জিয়াইর রহমানকে ১৯৮১ সালে অভ্যন্তরীণ সামরিক দ্বন্দ্বের কারণে হত্যা করা হয়। পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া দলের দায়িত্ব নেন। একই বছর, শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফেরেন।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। বিএনপি জয়ী হওয়ার পর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। পরবর্তী ৩৩ বছরে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর বাদ দিয়ে খালেদা জিয়া মোট ১০ বছর এবং শেখ হাসিনা ২১ বছর ক্ষমতায় থেকেছেন। গত এপ্রিলে ঢাকায় নেয়া শেখ হাসিনার এক সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে তাকাহাসি বলেন, সাক্ষাৎকারের সময়, শেখ হাসিনা তাকে ২০২২ সালের হালনাগাদ তথ্যসমৃদ্ধ পরিসংখ্যান দিয়েছেন। সেখানে ২০০৬ সাল থেকে অর্থাৎ খালেদা জিয়ার সরকারের শেষ বছর থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য, শিক্ষা এবংবিদ্যুতায়ন সহ ৫৩টি ক্ষেত্রে চমৎকার উন্নতি দেখা যায় ।
বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্লেষণের অন্যতম সংগঠন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ডাব্লিউইএফ এর রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৫৯তম স্থানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তাকাহাসি৷ তিনিবলেন, লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠায়এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে বল ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, লাওস থেকে পিছিয়ে রয়েছে। ২০০৬ সালে ডাব্লিউইএফ এই রিপোর্ট প্রকাশ শুরু করেছিল। তখন এই র্যালঙ্কিংএ বিশ্বে বাংলাদেশের নাম ছিল ৯১ নম্বরে।
বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে অগ্রসর হয়েছে, তার জন্যবিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাফল্যের উদাহরণ দেন তাকাহাসি। তিনি বলেন, প্রথমত, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে নারীদের জন্য সংসদীয় কোটা বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রাথমিক ভাবে ১৫টি আসন, বা মোট ৫% নারীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। এই কোটা এখন ধীরে ধীরে ৫০টি আসনে বা শতকারা ১৪ভাগে এ উন্নীত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে তিনি, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে উল্লেখ যোগ্য উন্নতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেন, ১৯৭৪ সালে প্রবর্তিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি মাল্টি ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্টের কারণে, উন্নয়নশীল দেশ গুলো থেকে পশ্চিমাদেশ গুলোতে পোশাক রপ্তানির উপর দেশ-নির্দিষ্ট সীমা আরোপ করাহ য়। তখন ম্যানুফ্যাকচারাররা বাংলাদেশকে খুঁজে নেয়। এখন বাংলাদেশ তাদের অনেকের বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপিং ইকোনমিসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মায়ুমিমুরায়ামার বরাত দিয়ে তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, পোশাক খাতের উন্নয়নের আগে, বাংলাদেশের উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক নারীর পেশা ঘর ও কৃষি কাজে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন দেশের প্রচুর শ্রমিক পোশাক শিল্পে কাজ করছে। বলা যায় দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকায় বিপ্লব হয়েছে। নারীরা এখন বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাাঁড়িয়েছে। এই খাতের ৪ হাজার কারখানায় এখন ৪ মিলিয়ন মানুষ কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে এখন, এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপ এবং ইউনিক্লো-র মতো গ্লোবাল ব্র্যান্ড গুলোতে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কথা উল্লেখ করে তাকাহাসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিলো মোট ৪৫ বিলিয়ন ডলার। দেশটি এখন শতকারা ৭.৯ ভাগ শেয়ার সহ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হয়ে উঠেছে। দেশটির এই উন্নয়ন স্পষ্ট তইনারীর অর্থনৈতিক শক্তির একটি অর্জন। শেখ হাসিনার সরকার স্পিকার মন্ত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়োগ দিয়েছে এবং মেয়েদের জন্য উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত অবৈতনিকশিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত কারের সময় তাকাহাসি জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশে নারীদের শ্রমে অংশ গ্রহণ ২০০৬ সাল থেকে ২১ ভাগ থেকে বেড়ে ৪৩ ভাগে উন্নীত হয়েছে।