সৈয়দ মো. সিয়াম
প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, মানুষ প্রাণীকুলের অংশ হলেও মন/বিবেক তথা মানবিকতা না থাকলে সেই মানুষ আর বন্যপ্রাণীর মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না। মানুষই সৃষ্টি জগতের একমাত্র প্রাণী যার নিজস্ব বিচার / বিবেক বুদ্ধি রয়েছে এবং সেই বিবেক দিয়ে নিজেদের তথা মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে থাকে। অবতরণিকায় এসকল কথা বলার মর্মার্থ হচ্ছে বাংলাদেশে ‘মানবাধিকার’ এই শব্দটি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বহুল আলোচিত শব্দ।
শাব্দিক দিক বিবেচনা করলে তার অর্থ দাঁড়ায় মানুষের অধিকার। যাহোক এইতো কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশ কিছু বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ছিল ‘মানবাধিকার’।
সেখানে এদেশেরই অনেক বিজ্ঞজনেরাই তাদের বক্তব্যে বলেছেন বাংলাদেশে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তারা তাদের লেখনী, বক্তব্য সবক্ষেত্রেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিকে জোর গলায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন মূলত নিজেদের বক্তব্যেও প্রচার বাড়ানোর জন্য। অথচ তারা অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি হবার পরেও এটা কখনোই ভাবেন না যে এতে করে নিজের দেশের ভাবমূর্তিকে বহির্বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
দেশকে সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ যে যেভাবেই বিশ্লেষণ করুক না কেন বাংলাদেশ নামক সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য এই নির্বাচন ছিল সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে নানামুখী সংকটের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার এক্ষেত্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে একটি জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছেন ফলশ্রুতিতে পুরো জাতি একটি সংকটময় পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু যারা ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত তারা সরকার বাহাদুর শত ভালো কাজ করলেও সেসকল খবরের ব্যাপারে আগ্রহী নন বরং তার প্রতিনিয়তই সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
অবশ্যই সরকারের কাজের যেমন গঠনমূলক সমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে ঠিক তেমনি ভালো কাজের সমর্থন জোগানোরও প্রয়োজন রয়েছে। একজন বিবেকবান নাগরিকের এমন বৈশিষ্ট্যধারীই হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এর কোন একটির অভাব থাকলে সেই নাগরিক দেশের জন্য কখনোই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না।
তিনি হয়ে পরেন একপাক্ষিক মনোভাবাপন্ন এবং এই একপাক্ষিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা অনেক সময়েই দেখা যায় হীনমন্যতায় ভোগেন তারা স্বাভাবিকভাবে কোন কিছুই ভাবতে পারেন না, নিজেদের বিবেকবর্জিত কাজ করতেও তারা দ্বিধাবোধ করেন না।
নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশ কিছু খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে বারবার বলার চেষ্টা করা হয়েছে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। কিন্তু হরতাল অবরোধের নামে নৈরাজ্য স্থাপন , আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিরীহ মানুষ হত্যা করা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?
এগুলো যেহেতু সরকার তথা আওয়ামী লীগ করছে না, তাই এগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনও নয় তাই এগুলো ফলাও কেও খবরেও আসে না।
একজন মানুষ বিবেকবান হবেন, মানবিক মানুষ হবেন এটাই স্বাভাবিক। আর এজন্য তিনি ঘরে—বাইরে সর্বত্রই মানবিক হবেন। কিন্তু বর্তমান সমাজের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।
আমরা মুখে অনেক কিছুই বলি কিন্তু আমরা নিজেরাই সেগুলো মানতে চাই না। ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকতেই আমরা বেশি ভালোবাসি আর মুখোশের আড়ালের কুৎসিত রূপ আমরা দেখাতে চাইনা, কারণ আসল চেহারা প্রকাশিত হলে আমার বাইরের মেকি মুখোশের তো কোন দাম থাকবে না, যা কিনা অনেকটা বাতির নিচে অন্ধকারের মতোই চিরন্তন সত্য।
এবারে আসা যাক ভিন্ন এক প্রসঙ্গে অতি সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায় ডেইলি স্টার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক জনাব আশফাক আহমেদ এবং তার স্ত্রী তাদেও বাসার কাজের মেয়েকে খুন চেষ্টার দায়ে আটক হয়েছে।
খবরে আরও জানা যায় চারতলায় বারান্দায় মেয়েটিকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন তারা, এলাকাবাসী দরজা খুলতে বললেও তারা খোলেননি। এটাই শেষ নয় আগেও ৬ মাস আগে আরেক জন কাজের মেয়েকে তারা হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এ বিষয়টি স্বনামধন্য পত্রিকার বিজ্ঞজন শুধু নয় কারোর কাছেই কাম্য নয়। এখানে কোথায় গেলো আমাদের বিবেক? কোথায় গেলো মানবতা?
জনাব আশফাক আহমেদ মানবাধিকারে পক্ষে সব সময় লিখে গেছেন , তিনি প্রতিনিয়তই বিশ্বে মানবাধিকার গল্প শোনাতেন। কিন্তু এখানে কোথায় গেলো তার মানবাধিকারের গল্প। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ সংশ্লিষ্ট আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মিডিয়া ব্রিফ করা হয়নি। মানবাধিকার কর্মীরাও মুখ বন্ধ করে বসে আছেন। কিন্তু কেন? অথচ এ ব্যাপারটিই যদি সরকারের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা আওয়ামী লীগের কোন ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত হলে আজকে পরিস্থিতি কী হতো, প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি। বিবেক, মানবতা আজ কোথায়?
আমরাই বা আছি কোথায়। আমাদের অবস্থাটা হলো এমন: পৃথিবীটা একটা রঙ্গমঞ্চ, আমরা সবাই এর কুশীলব, আর যে যতো ভালো অভিনয় এখানে করতে পারবে সেই ততো বেশি টিকে থাকবে। কিন্তু না এতকিছুর ভীরেও একটি সত্য আমাদের মানতে হবে আর তা হলো সবার আগে আমাদের দেশমাতৃকা আর সেইসাথে আমাদের সবাইকে সত্যিকারের মানুষ হতে হবে তাহলেই হবে সুন্দর আগামী।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।