নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী-লীগ পতনের আকাঙ্ক্ষায় বিএনপির নেতৃত্বে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার পতনের যুগপৎ কর্মসূচি শুরু করে কয়েকটি বিরোধী দল। এরপর তারা একসাথে, কখনও একটু আলাদা হয়ে কর্মসূচি পালন করেছে। কখনও অভিযোগ উঠেছে বিএনপি স্বেচ্ছাচারিভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার সঙ্গে যুগপৎ একমত না। এসবের মধ্যেই চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত যুগপৎধারায় কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু তারপর দায়িত্বশীল কোনো কর্মসূচি দেবেন নাকি নতুন নির্বাচনের গো ধরে থাকবেন সে নিয়েও নেই কোন নির্দেশনা।
বিএনপি ও যুগপতে যুক্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় রাজনৈতিক নেতাদের কারাগার থেকে বের করে না আনা পর্যন্ত তাদের করণীয় কী হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সমমনাদের সঙ্গে বসারও সুযোগ হয়নি। একইসঙ্গে সরকার গঠনের পরের নব্বই দিন তার আচরণ কী থাকছে সেটাও পর্যালোচনা করা দরকার। কিন্তু তাই বলে যুগপতের যৌথতা কেনো দেখা যাচ্ছে না প্রশ্নে তারা বলছেন, আমরা আছি। পারস্পারিক বোঝাপড়ার জন্যওতো কিছু সময় লাগে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো মনে করছে, এই তিন বিষয়ের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক দিকটিও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় নেতাকর্মীদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনা। এমনকি উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান কী হবে সেটাও এখন পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি দলগুলো।
গণতন্ত্র মঞ্চের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলছেন, যুগপৎ কর্মসূচিতে এক ধরনের টান লেগেছে। এটা লুকানোর কিছু নেই, দৃশ্যমান। দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির সঙ্গে বৈঠক হলেও নিজেদের মধ্যে সেটা নিয়ে আর কোন আলাপ হয়নি। সরকার গঠনের এক মাস পার হলেও বিএনপির দিক থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নজরে না আসায় হতাশায় নিমজ্জিত কয়েকটি দল। এখন যদি যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি দিতে হয় তবে আবারও পুরোনো কিছু বিষয় আলোচনা করে সমাধান করে তবে নতুন করে শুরু করা যাবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকি এরই মধ্যে গণমাধ্যমে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন চলবে।‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অরক্ষিত সীমান্ত, ব্যাংক লুটপাট, একতরফা নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সভা-সমাবেশ-মিছিল দলীয় জায়গা থেকে জোটগতভাবে চলমান আছে। জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই নতুন কর্মকৌশল নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কেন্দ্র থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলছে।
মঞ্চের আরেক নেতা বললেন, ‘আন্দোলনে যেতে ইকুয়েশন আছে। নিজেরা মুভমেন্ট করতে গেলে এক রকম। স্বতঃস্ফূর্ত হলে আলাদা। এ জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’
অন্তত ৩৯টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎধারায় কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব দল ও জোট হলো, গণতন্ত্র মঞ্চ (৬ দলীয় জোট), ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টি (দ্বিদলীয় জোট), সমমনা জোট (১১), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য (৪ দল)। এককভাবে পালন করেছে বিএনপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
যুগপতের ধরনেও পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর একটি অংশ। একাধিক দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে জামায়াতকে একসঙ্গে নিয়ে আন্দোলন না করলেও এবার কয়েকটি পক্ষ তৎপরতা শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের অনুষ্ঠানে যেতে শুরু করেছেন বিএনপির ডানপন্থি নেতারা। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর মধ্যে জামায়াত প্রভাবিত দলগুলোও চাইছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী এই দলটিকে নিয়ে যৌথ আন্দোলনে যেতে। এরইমধ্যে ১২ দলীয় জোটের একটি অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল হালিমের অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে একাধিক দলের মধ্যে অস্বস্তি বেড়েছে। সব মিলিয়ে যুগপতের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও কৌশল নির্ধারণে খানিক সময় নেবে বিএনপি ও যুক্ত দলগুলো, এমনটাই বলছেন বিরোধী দলের একাধিক নেতা।