নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে চিনি, চাল, খেজুর ও ভোজ্যতেলের দাম কমিয়ে আনতে তৎপর সরকার। এজন্য এই চারটি পণ্যের শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হবে। আর এই শুল্ক-কর ছাড় দেওয়ার সব প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)জারি হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে চার নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক-কর কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছে। শুল্ক বিভাগের চিঠির পর এসব পণ্যে কতটুকু শুল্ক কমলে কত রাজস্ব ক্ষতি হবে ইত্যাদির হিসাব-নিকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত সংস্থাটি চূড়ান্ত করে তা অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে সারমর্মে অনুমোদনও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে। এখন এর প্রজ্ঞাপন জারি করতে যেটুকু সময় লাগবে, তার অপেক্ষা। এদিকে গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এই চার পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হবে বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম।
চিনি আমদানিতে বর্তমানে পাঁচ ধরনের শুল্ক-কর রয়েছে। প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে আগে আমদানি শুল্ক ছিল নির্ধারিত তিন হাজার টাকা। গত নভেম্বরে তা কমিয়ে অর্ধেক অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। এর বাইরে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ৩ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) এবং ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) রয়েছে।
পরিশোধিত চিনিতে বর্তমানে আমদানি শুল্ক নির্ধারিত তিন হাজার টাকা, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, এআইটি ৫ শতাংশ, এটি ৫ শতাংশ এবং আরডি রয়েছে ৩০ শতাংশ। দুই ধরনের চিনিতে এ শুল্ক–কর কাঠামো ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই দুই ধরনের চিনি আমদানিতেই ৩০ শতাংশ আরডি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছে এনবিআরকে।
বর্তমানে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। বাকি ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়। ভোজ্যতেল আমদানির ওপর বর্তমানে ভ্যাট রয়েছে ১৫ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে এই ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করেছে।
ভোজ্যতেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ২০২২ ও ২০২৩ সালজুড়ে কয়েক দফায় ভ্যাট ছাড় দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ভ্যাট–ছাড় সুবিধা ছিল গত বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। আমদানি পর্যায়ে শুধু ৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড়–সুবিধা বহাল রাখার অনুরোধ জানালেও এনবিআর তা করেনি। এর ফলে বর্তমানে ভ্যাট ১৫ শতাংশই রয়েছে।
দেশে বছরে প্রায় ৫০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে, যার পুরোটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। খেজুরের মানও বিভিন্ন ধরনের। বর্তমানে খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এআইটি, ৫ শতাংশ এটি এবং ৩ শতাংশ আরডি রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে জানিয়েছে, তুলনামূলক কম দামের খেজুরে যেন শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রী জানান, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যৌক্তিক মূল্যে বাজারে কৃষি পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। ভোক্তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাজারে কখনো যাতে পণ্যের সংকট না হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা যে মাঝে মাঝে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমদানি-রপ্তানি করতাম, এবার বাজার মনিটরিং করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে দেবো। অফসিজন থেকে পিকসিজনে কী পর্যায়ে আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য একসঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো। এতে ভোক্তা থেকে উৎপাদক পর্যায়ে সবাই স্বস্তিতে থাকবে।
ভারতের সঙ্গে পেঁয়াজ ও চিনি নিয়ে একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখন তা কেটে গেছে। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী রমজান উপলক্ষে পেঁয়াজ ও চিনি আমদানির প্রক্রিয়া সহজ করার কথা জানিয়েছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাবেন।
পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে র্যাব ফোর্সেস নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন।
এম খুরশীদ হোসেন বলেন, র্যাব ফোর্সেস অতীতের মতো ভবিষ্যতেও মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে র্যাব ফোর্সেস নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।