নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতে মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনার সৃষ্টি কিনা ভেবে দেখতে হবে। তিনি নানা ইঙ্গিত করে সরকারের সম্পৃক্ততার প্রশ্ন তুলে ধরে বলেন, কী ঘটতে যাচ্ছে? এর অন্তরালে কী আছে? বিদেশি রাষ্ট্রের কোন ইস্যুতে এধরনের মন্তব্য করে বিএনপি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে তা তাদের নিজেদের মধ্যে ঘটছে। সে বিষয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে যে মন্তব্য বিএনপি করেছে সেটা তাদের অপরিপক্ক কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছে।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘একদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরম্ভ করে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণের মাধ্যমে আমাদের বিজিবি সদস্য ও আমাদের জনগণকে হত্যা করছে। আবার পূর্ব দিক থেকে মিয়ানমারের গুলি আমাদের দেশের এ পর্যন্ত দুই জন নিহত, কয়েকজন আহত এবং ঝাঁকে ঝাঁকে সেখানে রাখাইন থেকে আসা সেনা সদস্য আশ্রয় নিচ্ছে। বলতে গেলে বাংলাদেশ আজকে ক্রসফায়ারের মুখে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এটি নিয়ে শুধু আমাদের ভা্বনা নয়, আপনাদেরও ভাবতে হবে যে… কী ঘটতে যাচ্ছে? এর অন্তরালে কী আছে? যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তার সঙ্গে এই সরকারের (বাংলাদেশ) কোনও গোপন সম্পর্ক আছে কিনা। অথবা এমনও হতে পারে যে, আজকে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই ব্যর্থ সরকার নানাভাবে জর্জরিত। জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র ফেরানোর জন্য সরকার এরআগেও কিন্তু একের পর এক ইস্যু তৈরি করেছে…। এই ইস্যু কি এককভাবে করছে, না যৌথভাবে করেছে, যেই যৌথভাবে তারা সরকারে আসছে।’

ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মিজানুর রহমান মনে করেন, মিয়ানমার যে আমাদের প্রতিবেশী এটা আমাদের ‘চয়েজ’ না। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এরকম একটি রাষ্ট্র আমাদের সীমান্তে রয়েছে যেখানে বছরের পর বছর সহিংসতা বলবৎ আছে। এটা নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। এখন মিয়ানমারে যা ঘটছে তা মূলত তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত। তার শিকার হচ্ছে কক্সবাজার বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান মনে করেন বিএনপি এধরনের কথা বলে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুটো প্রতিবেশি রাষ্ট্র এধরনের পারস্পারিক মন্তব্য করা শুরু করলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে সেই জ্ঞান থাকা জরুরি। এখন যা ঘটছে তা মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ ইস্যু। আমাদের সঙ্গে সীমানা থাকায় অবধারিতভাবে আমরা এই শিকারে পরিণত হচ্ছি। আমাদের দেশেরই রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে যদি তার ভুল ব্যাখ্যা যায় সেটা জনমনে শঙ্কার জন্ম দিবে। মানুষকে ভয় দেখানোর অধিকার কারোর নেই।’