নিজস্ব প্রতিবেদক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বেশ চাপের মধ্যে পড়া অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আবারও দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে উঠেছে। এর অর্থ হলো ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের তুলনায় ডিসেম্বরে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতে ঋণের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ষষ্ঠ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের মাস নভেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯০ শতাংশে নেমে এসেছিল। অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে–১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
গত বছরের ১৮ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, তাতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরেছিল ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে গত ১৭ জানুয়ারি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে সীমিত রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (২০২৩ সালে ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি) তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ২৯ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। অথচ গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) এই সময়ে সরকার ১৫ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল।
অর্থনীতির বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে ১৪ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি মন্দ নয়। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদণা ঘোষণা করেছিল, তাতে এই ঋণ প্রবৃদ্ধিতে অবদান ছিল। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে বিনিয়োগের একটি অনুকুল পরিবেশও দেখা দিয়েছিল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগে নেমেছিলেন। ব্যাংকগুলো তাতেও বিনিয়োগ করেছেন। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের একটি গতি এসেছে।’