মাহমুদুর রহমান

বিএনপি ও তার মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সরকার পতনের দিবাস্বপ্ন দেখছে।  ক্ষমতায় আসার জন্য দীর্ঘকাল ধরে সহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, যার লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং নিজেদেরকে ক্ষমতায় আনা। 

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন তাদের আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল না বরং সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতায় আসাই ছিলো তাদের মূল উদ্দেশ্য। 

তারা বিদেশি শক্তির কাছে লবিং এবং আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে একাধিকবার। বিএনপি ও তার মিত্ররা মনে করেছিল যে, পশ্চিমা বিশ্বের ওপর নির্ভর করে তারা সরকারের পতন ঘটাতে পারবে।  তারা আরো ভেবেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের পতন অনিবার্য হবে।  তবে বাস্তবতা এমন নয়। 

বিএনপি ও তার মিত্ররা পশ্চিমা দেশগুলি থেকে এই বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাননি।  পশ্চিমা দেশগুলো স্পষ্ট করে বলেছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাদের কোনো অবস্থান নেই, বরং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। 

নির্বাচনের পর রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ভুটান, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, মরক্কো, ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো, এমনকি ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রশংসা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, জাপান, চীন, জার্মানিসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকরা।  সব সত্য জেনেও বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির আন্দোলন ও সহিংসতাই প্রশ্ন তোলে যে তারা কতটা জনমুখী বা গণতান্ত্রিক। 

নির্বাচন বর্জন ও সরকার পতনের নামে বিএনপির এই সহিংস পদক্ষেপ তাদের রাজনৈতিক পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগায়। এই ধরনের পদক্ষেপ গণতন্ত্রের মূল চেতনা ও জনমতের বিরুদ্ধে। 

জনগণের জানমালের ক্ষতি করে বিএনপির এই আচরণ জনগণের স্বার্থ ও অধিকারের প্রতি তাদের মনোভাব নিয়ে সংশয় তৈরি করে।

নির্বাচন বাতিল চাওয়ার মাধ্যমে তারা একতরফা আখ্যা দিয়ে সংসদ ও সরকারকে প্রতিরোধের ঘোষণা করেছে। এটা কি জনমুখী বা গণতান্ত্রিক রাজনীতির লক্ষণ?

রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে কি না এই ধরনের আন্দোলন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্রদের এই সহিংস ও অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ গণতন্ত্র ও জনমতের প্রতি তাদের অবজ্ঞা ও অবহেলার প্রতীক।

তাদের এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে অস্থিরতা ও সংঘাত সৃষ্টি করেছে যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য হানিকারক।

সরকার পতনের আন্দোলন ও জনগণের প্রতি এই ধরনের সহিংস প্রচেষ্টা দেখিয়ে বিএনপি তার রাজনৈতিক আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই আন্দোলন শুধু সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, বরং জনগণের সাথে সংলাপ ও সহযোগিতার প্রতি তাদের অবহেলা ও অবজ্ঞার প্রতিচ্ছবি। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আরও অস্থির ও দ্বন্দ্বময় হয়ে উঠেছে।

জনগণের স্বার্থ ও গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির এই ধরনের আচরণ দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও তাদের নীতি-অনুশীলনের উপর প্রশ্ন তৈরি করে। 

নির্বাচনে না এসে লাগাতার এসব অর্থহীন সহিংস আন্দোলন, অগ্নিসন্ত্রাস কিংবা কালো পতাকা মিছিল এসব তাদের দলের নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে। সংসদের শুরুর দিন কালো পতাকা মিছিল তাদের নিজেদের পরাজয় বরণ করাই প্রমাণ করে।

এই ধরনের রাজনীতির ফলে বিএনপি তার সম্ভাব্য রাজনৈতিক লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি-ই ভোগ করবে। এটি দলের ভিতরে ও বাইরে সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 

ইতোমধ্যে তারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অর্থহীন আন্দোলনের জন্য জনসমর্থন এবং জনগণের আস্থা হারিয়েছে। 

অতএব, বিএনপির উচিত হবে তার রাজনৈতিক পদ্ধতি ও কৌশল পুনর্বিবেচনা করা এবং গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পথ খোঁজা।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।