নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় লাখ লাখ টাকা খরচ করর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, যার উদ্দেশে চিঠি, তাকে না দিয়ে হাজার হাজার ডলার খরচ করা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেলজয়ী এবং ১১৭ জন ব্যবসায়ী ও সুশীল নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেন। গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এ ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপন আকারে এই খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়।

ওয়াশিংটন পোস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা। এতে বিজ্ঞাপনের জন্য অনেক ডলার খরচ করতে হয়। সাদাকালো পাতায় প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের জন্য তারা ৮০৭ ডলার নিয়ে থাকে।    ড. ইউনুসের পক্ষে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি ৫ কলাম ১৯ ইঞ্চি। ফলে এর পেছনে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ৭৬ হাজার ডলারের বেশি, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা। এটি শুধু বিজ্ঞাপন প্রকাশের খরচ। এছাড়া বিজ্ঞাপন বানাতে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করতে আলাদা টাকা দিতে হয়। যে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এ বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছে, তাদের ফি আলাদা।

এর আগে গত বছরের ৭ মার্চ দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায়  ড. ইউনূস ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। সেসময় ওয়াশিংটন পোস্টের সাত নম্বর পৃষ্ঠাটি বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার হয়। ৭ মার্চ ওই পৃষ্ঠায় সাড়ে ১৮ ইঞ্চি, পাঁচ কলামে ওই খোলা চিঠিটি ছাপানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনের আকার ছিল সাড়ে ৯০ কলাম ইঞ্চি। অনলাইনে পাওয়া তথ্যানুসারে বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট ৮০৭ ডলার।

সে হিসাবে ইউনূসের এই বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি যার জন্য খোলা চিঠি, তাও বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপাতে হবে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত যার জন্য চিঠি লেখা হয়, তাকেই সেটি পাঠানো হয়। অথচ ড. ইউনূসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি ছাপানো হয়েছে বিদেশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে। বাংলাদেশের পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি ছাপা হলে, সেটি প্রধানমন্ত্রীসহ সারাদেশের মানুষ জানতো। কিন্তু তা ছাপা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায়। যদিও সেই কাগজের পত্রিকা বাংলাদেশে সংস্করণ বা ছাপা হয়না। অথাৎ বাংলাদেশে এই কাগজ পাওয়া অসম্ভব। যার উদ্দেশে চিঠি লেখা তাকে না দিয়ে ডলার খরচ করা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।

জ্যেষ্ঠ  সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‌‘এটি কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিকতা না। তারা এটি নিয়ে প্রতিবেদন করেনি। তাদের গবেষণা কিংবা অনুসন্ধানও না। তারা বিজ্ঞাপন ছেপেছে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন দলীয় প্রেক্ষাপটে সুশীল সমাজ বিভক্ত। আমরা জানি, কোনো একটি ইস্যুতে কেউ কোনো প্রতিবাদলিপি লিখলে ফোন করে বলেন যে ভাই আপনার নাম দিয়ে দিলাম। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তো একজন ‘আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়’। তার জন্য ব্যাপারটি কিন্তু তাই। অর্থাৎ তার বিষয়ে কোনো কিছু লিখলে ফোন করে বলা হয় যে ভাই আপনার নামটি কিন্তু দিয়ে দিলাম। অর্থাৎ একটি চিঠি লিখে টেলিফোন করে তাদের নাম দেয়া হয়েছে কেবল।’

ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়। এছাড়া ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম “শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের” ৪ হাজার ৭০০ কোটি আত্মসাৎ করেছেন। এরমধ্যে ১৭৬ জন তাদের হিস্যার ৪৩৭ কোটি টাকার জন্য অভিযোগ করেছেন। পরে অভিযুক্তরা মামলা করার প্রস্তুতি নিলে সেই টাকা তাদের দিয়ে সমঝোতা করেন।

শ্রম আইন লংঘনের সকল অভিযোগ, মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য বা রায় নিজেদের পক্ষে আনার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে  ড ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠান “ঢাকা লজিস্টিক এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড” নামে দালাল প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেন। টাকার অংকে সেই চুক্তির পরিমাণ ১৩.৮০ কোটি টাকা। ঢাকা লজিস্টিকের প্রস্তাব ছিল, কিভাবে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মামলার সাথে সম্পর্কিত বিচারক, মন্ত্রী সচিবদের মামলার রায় প্রভাবিত করে নিজেদের পক্ষে আনা যায়। গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করে ঢাকা লজিস্টিকস। উক্ত বোর্ড সভায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ড. ইউনুস। বোর্ড সভায় দেয়া বক্তব্যের অডিওতে শোনা যায়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস বোর্ড সভায় এই বিষয়ে সিদ্ধান্তের সময় ডিএলএসএসের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা (ঘুষ প্রদানের বিষয় সমূহ) অন্তর্ভুক্ত না করে শুধুমাত্র ডিএলএসএসের সঙ্গে চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্তটুকু কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেন। এছাড়া ঐ কার্যবিবরণীর তথ্যমতে আরো পাওয়া যায়, ড. ইউনূস পরিচালিত গ্রামীণ টেলিকম ইতোপূর্বে শ্রম আদালতের একজন চেয়ারম্যানকে ঘুষ প্রদান করে আসছিল।