বিশেষ প্রতিনিধি
সরকার বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচী ইস্যুতে আবারও বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব বাড়ছে। শুক্র ও শনিবারের কর্মসূচী ঘিরে দূরত্বের এই বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ কর্মসূচীর ঘোষনা না করে আগামী রবিবার বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম পৃথক দিনে কর্মসূচী দিল জামায়াত।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর দূরত্ব বাড়েনি। এই দূরত্ব লোক দেখানো। জামায়াত কিছুটা কৌশলি অবস্থান নিয়েছে। যাতে তারা নিজেদের নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়ে বেশি গুরুত্ত্ব দিচ্ছে। জামায়াত বিএনপির এমন মিত্র যে, দলটি কখনও বিএনপি ছাড়া পথ চলবে। সময় মত ঠিকই তারা একত্রে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল এবঙ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে শুক্র ও শনিবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। বিএনপি জোটের অন্য শরিকরা এই কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে একই দিনে কর্মসূচী ঘোষণা করলেও জামায়াতে ইসলামি বিএনপিকে অনুসরণ করেনি। একই ইস্যুতে তারা আগামী রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
গত বুধবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে বিএনপি গত রবিবার কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা করে।
জামায়াতের একটি জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে একই দিনে একই কর্মসূচী দেওয়ার জন্য জামায়াতকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জামায়াত সেটি কৌশলে প্রত্যাখ্যান করেছে। জামায়াতের সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে না পারার জন্য জামায়াত বিএনপিকেই দায়ি করছে। তারা বলছে, নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে বিএনপি তৎপর ছিলো না। নির্বাচন বিরোধী কর্মসূচীর সবগুলোই পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপিকে রাজপথে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তারা এখন কারাবন্দি। এই অবস্তায় জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনের চেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করতে বেশি গুরুত্ত্ব দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, জামায়াত হচ্ছে খুবই ধূর্ত রাজ্যনৈতিক দল। ধর্মকে পুঁজি করে পথ চলা এই দলটির সঙ্গে বিএনপির সখ্যতা এক দিনের নয়। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি-জামায়াত এক সঙ্গে জোট করে নির্বাচন, সরকার গঠন, সরকার বিরোধী আন্দোলন সবই করছে। কখনও কখনও তারা প্রকাশ্যে এক সঙ্গে না হয়ে আলাদা আলাদা ভাবেও আন্দোলন করেছে।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, জামায়াত এখন নিজেদের স্বার্থে কিছুটা কৌশলী অবস্থা নিয়েছে। তারা দেখাতে চাচ্ছে বিএনপির সঙ্গে তারা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। জামায়াতের নেতারা মুখে যতোই বলুক না কেন যে, তারা বিএনপির সঙ্গে নেই বাস্তবে তাদের সম্পর্কটা খুবই মধুর এবং গোপনে গোপনে সব যোগাযোগ নিজেদের মধ্যে আছে। তারা বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়া করেই পৃথক দিনে কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
সুভাষ সিংহ রায় বলেন, জামায়াত যে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেনি সেটা আরও কিছুদিন গেলেই দেশের মানুষ বুঝতে পারবে।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও জামায়াত। তাদের জোট হরতাল, অবরোধ ও গণসংযোগের কর্মসূচি একসঙ্গে পালন করেছে।
নির্বাচন ঠেকানোর এসব কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে বাস,ট্রেন, ট্রাকে অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা। এতে বহু লোক হতাহত হয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিনি শত যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
অবশ্য জামায়াতের একটি সূত্রের দাবি,তারা যেভাবে সরকার পতনের আন্দোলন চাচ্ছেন বিএনপি সেই জায়গা থেকে কিছুটা দূরে চলে আসছে। কালো পতাকা প্রদর্শনের মত দুর্বল কর্মসূচী পালন করে সরকার পতন ঘটানো যাবে না। এ কারণে বিএনপির সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে এই দূরত্ব যে বিএনপির সঙ্গে স্থায়ী কোনো দূরত্ব এমনটা নয়।
প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াতের সখ্যতা ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় থেকে। তবে তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক জোট গঠন হয় ১৯৯৯ সালে। তারপর থেকেই একসঙ্গে পথ চলছে বিএনপি-জামায়াত।