ড. মোবারক হোসেন
বাংলাদেশের একটি বড় দলের নির্বাচনে না আসা এবং নির্বাচনে বাধা দেয়ার পাহাড় সমান চেষ্টা, বিদেশি ষড়যন্ত্র, নির্বাচনী প্রার্থীদের ভয়-ভীতি জনমনে আতঙ্ক, সরকারি কর্মকর্তাদের তারেক রহমানের ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নির্বাচনে সহযোগিতা না করার আহবান ইত্যাদিকে অপেক্ষা করে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকারের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জ ছিল। সংবিধানের ধারাবাহিকতা এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যম। এই নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। বিএনপি’র বাধা সত্ত্বেও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এবং নানা দল মতের প্রার্থীদের অংশগ্রহণে উন্মুক্ত পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমরা প্রত্যক্ষ করলাম।
নির্বাচন পরবর্তীতে আমরা দেখলাম (টিআইবি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন একপাক্ষিক ও পাতানো বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে। আসলে আমরা টিআইবির রির্পোটের সাথে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বাধ্যবতার কোনে মিল খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের রির্পোটের নানা ধরনের তথ্যের অমিল আমরা লক্ষ করলাম। আমরা আসলে গবেষণার কোন সঠিক ফলাফল পেতে চাইলে আমাদের ডাটা সঠিক ভাবে এটি দিতে হবে। গবেষণা কার্যক্রম উপস্থাপন করতে হবে। আমরা দেখলাম টিআইবি ৩০০টি আসনের মধ্যে ৫০টি আসন বেছে নিয়েছে আসলে কোন ভিত্তিতে ৫০টি আসন বেছে নিয়েছে তা তারা স্পষ্ট করেনি। সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর কতগুলো ভোট কেন্দ্রের তথ্য নিয়েছে তাও উল্লেখ করেনি। আমরা জানি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪২ হাজার ৩৫০টি ভোট কেন্দ্র ছিল তার মধ্যে তারা কত কেন্দ্রের তথ্য দিয়েছে তাও উল্লেখ করেনি। তাই আমরা বলতেই পানি তাদের গবেষণা কার্যকর হবে না। আর গবেষণার ফলাফল সঠিকভাবে প্রকাশ পাইনি। আমরা টিআইবির রির্পোর্টের অবাস্তব কিছু চিত্র আমরা তুলে ধরলাম –
মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করেছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মোট ২ হাজার ৭১৬টি মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। তার ভিতরে ৭৩১ জন প্রার্থীকে বাতিল করেছে ইসি। আমরা দেখলাম বরিশাল-৪ আসনের প্রার্থী শাম্মী আহম্মদকে দ্বৈত নাগরিকের কারণে প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি।
আমরা টিআইবির রিপোর্টে দেখলাম আওয়ামী লীগের সকল প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু বাস্তবতায় আমরা দেখলাম ইসি ৭৬২ বার শোকজ করেছে যার মধ্যে ৩০০ বারই ছিল আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের। এছাড়াও ৬৩টি মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। টিআইবি তাদের রির্পোটে উল্লেখ করেছে পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে, বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের বাধা দেয়া, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাত, সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাধা ইত্যাদি। কিন্তু তারা মাত্র ৫০টি নির্বাচন আসনে কাজ করে তাও আবার কতগুলো কেন্দ্র তাও উল্লেখ করেনি তবে আমরা কিভাবে তাদের তথ্যের সত্যতা বুঝবো।
আর টিআইবি ২৭ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশ ভোটার টান আউট দিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে। তার বাস্তবতা হলো বিকাল ৩টিায় যে রির্পোট প্রকাশ করা হয়েছিল তা কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগের রির্পোট তার মানে দুপুর ০১টায় ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রচন্ড ঠান্ডা থাকায় দুপুরের পরেই ভোট পড়বে তাই বাস্তব। তার মাঝে ৪১ শতাংশ ভোট পড়া অবাস্তব নয়।
আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে পারলাম যে ঢাকা-১৯ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ৮৪ হাজার ৪২১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আর নৌকা প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন সাবেক দুর্যোগ ও ব্যবস্থা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান তার ভোট সংখ্যা ৫৬ হাজার ৩৬১টি।
হবিগঞ্জ-৪ উক্ত আসনে নৌকা প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেসামরিক বিমান চলাচল অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুর হক সুমন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯টি ভোট।
গাজীপুর-৫ আসনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ৬৭ হাজার ৭৮৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আখতরুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী ৮২ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে পুলিশের সাবেক ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ নৌকার প্রার্থী ৬৮ হাজার ৯৩২ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহরাব হোসেন ৮৯ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন।
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আহমিনা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শকের আপন ভোটভাই নৌকা প্রার্থী আল মাহমুদ ৫৮ হাজার ৬৭২ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ৬৭ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
কুষ্টিয়া-২ আসনে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও তিনবারে সংসদ সদস্য ও আওয়অমী লীগের ঘনিষ্ঠ বিএ হাসানুল হক ইনু পরাজিত হয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট পেয়ে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আরেফিন ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
আমরা তাহলে উপরের বিশ্লেষণে কি বুঝলাম নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হতো হবে কি তারা পরাজিত হতো। তাই আমরা বলতেই পারি পিআইবি যে রির্পোট দিয়েছেন তা অবাস্তব।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়