নিজস্ব প্রতিবেদক

অবৈধ পন্থায় যারা ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন তাদের জন্য যথাযথ জবাব। ক্ষমতায় থেকেও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি মনে করেছিলো বাইরের কোনো দেশ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। কিন্তু এরকম ধারণা ভুল। বাংলাদেশের ভাগ্য সবসময় তাদের জনগণই নির্ধারণ করে।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচন যেভাবে হওয়ায় উচিত এবারের নির্বাচন ঠিক তেমনই হয়েছে। এতো সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরও ৪০% ভোট কাস্ট হওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, `ভোটার তালিকা ৭-৮ বছর আগের। অনেক ছাত্র, পেশাজীবী বিদেশে চলে যান। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিন এবং ভোটগ্রহণের সঙ্গে জড়িতরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পান না।’ বিএনপি-জামায়াত অনেক মানুষকে ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন।‘  উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্যও এই নির্বাচন জরুরি ছিলো বলে মত দেন তিনি। নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি বাসে-ট্রেনে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারাসহ অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছে উল্লেখ করে তখন মানবতা কোথায় ছিলো, প্রশ্ন রাখেন তিনি। কোনোধরনের অগ্নিসন্ত্রাস, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উত্থান, কুলাঙ্গারদের ক্ষমতাদখল জনগণ চায় না বলে তারা ভোটের মাধ্যমে তা ঠেকিয়ে দিয়েছে জানিয়ে ড. জিনাত হুদা বলেন, জনগণ খাদ্য, নিরাপত্তা, উন্নয়ন চায়, সাস্টেইনিবিলিটি চায়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা গবেষণা এবং উদ্ভাবনই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ ও সোনার বাংলাদেশের চালিকাশক্তি। জনগণের পেটে ভাত না থেকে, যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা না থেকে যদি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থাকে, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে হবে, প্রশ্ন রাখেন ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। ১৯৭১এর রাজাকারদের বীভৎসতার সঙ্গে সাম্প্রতিক অগ্নিসন্ত্রাসের তুলনা করে এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার পরেও ৪০%এর বেশি ভোটাধিকার প্রয়োগ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই বলে জানান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান। তিনি বলেন, ‘৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়াই এই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম প্রমাণ।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছি তা আজ সুসংহত। কিন্তু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আজকে চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু পারতেন দেরিতে নির্বাচন দিতে। কিন্তু তিনি ৭৩ সালেই নির্বাচন আয়োজন করেছিলেন। সেই নির্বাচনের পর অন্য নির্বাচন আসার আগেই বঙ্গবন্ধুকে তারা হত্যা করে।’

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে কার্যকর ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশের জনগণকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে, তা অতুলনীয় বলে নিজ বক্তব্যে মন্তব্য করেন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। গ্রাম ও শহরে বর্তমান সরকারের করা যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান।