বাংলাদেশের নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনার বিজয়কে বাংলাদেশ এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন ভারতের লেখক ও কলামিস্ট শিবদাস ভট্টাচার্য। ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, এটা অনস্বীকার্য যে শেখ হাসিনা যথাসময়ে একজন প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর শাসন বাংলাদেশে অনেক কিছুকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শেখ হাসিনা একজন উদার নেতা।

শেখ হাসিনা ও তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অনেক অভিযোগ উত্থাপন করলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একমত যে, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে মৌলবাদের হাত থেকে রক্ষা করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রাখা সম্ভব হয়েছে, লিখেছেন শিবদাস। তবে এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে নির্বাচন বর্জন করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার উত্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে উর্বর ভূমিতে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে বলে মনে করছেন শিবদাস ভট্টাচার্য।

বাংলাদেশের অস্থির ইতিহাস বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার মর্যাদাকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে শিবদাস লিখেছেন, শেখ হাসিনার শাসন ক্ষমতার বিভাজন বজায় রেখেছেন এবং দেশে বিশেষ করে বেসামরিক প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বিকশিত করতে সহায়তা করেছেন। জিয়াউর রহমান আর এইচ.এম. এরশাদের শাসনামলের পরিণতি বাংলাদেশ জানে, উল্লেখ করে শিবদাস লিখেছেন, সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য গড়ে তুলতে সফল হয়েছেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে মৌলবাদী দলগুলোর অস্তিত্বের কথা নিজের লেখায় বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন শিবদাস। সময়ের সাথে সাথে, বাংলাদেশ আধুনিক গণতন্ত্র অনুসারে বিকশিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা, কৌশলগত লক্ষ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করে। শেখ হাসিনাকে কৃতিত্বের দাবিদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর নীতি বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনছে। শিবদাসের মতে, অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা ছাড়াও বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অটুট সম্পর্ক বজায় রেখেছে। একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সূচনায় ভারত অনেক অবদান রেখেছে, মনে করিয়ে দেন শিবদাস ভট্টাচার্য। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেন। সার্বভৌম মর্যাদা নিয়ে তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিয়েছেন হাসিনা। তাঁর বক্তব্যে ছিলো, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলে এবং একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিকশিত হয়েছে, যার বৃহত্তর প্রভাব রয়েছে। ভারত প্রকৃতপক্ষে হাসিনাকে গণতন্ত্রের সমর্থক হিসেবে দেখে বলে নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন শিবদাস ভট্টাচার্য।

হেফাজতে ইসলামের প্রসঙ্গ টেনেছেন শিবদাস ভট্টাচার্য। সংগঠনটির সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখার মাধ্যমে তাদেরকে প্রশমিত রেখেছেন শেখ হাসিনা ও তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশ সরকার সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছে।

শিবদাস বলতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে ভারতের জন্য আরও কার্যকরী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এখানে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি। তার বক্তব্য, চীন এরই মধ্যে ভারতের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে কৌশলগত ঘাঁটি তৈরির নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। নির্বাচনে জয়ের পর শেখ হাসিনা বার্তা দিয়েছেন যে, তার সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে সব বিকল্প পথ খোলা রাখবে।