নিজস্ব প্রতিবেদক
মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। অর্থাৎ কেনাকাটার ক্ষেত্রে মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হচ্ছে। এছাড়া নানা সংকটের মধ্যেও পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি: গত ডিসেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৪১ শতাংশ, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সবশেষ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৩ শতাংশ। নভেম্বরে এটি কমে হয় ৯.৪৯ শতাংশ। গত এপ্রিলে এটি ছিল ৯.২৪ শতাংশ। মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। বিবিএসের তথ্যমতে, ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯.৫৮ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ১০.৭৬ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, নভেম্বরে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার ছিল ৯.৬২ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে কিছুটা কমে হয়েছে ৯.৪৮ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে আগের মাসের ১০.৮৬ শতাংশ থেকে কমে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৬৬ শতাংশ হারে। শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হার নভেম্বরে ছিল ৯.১৬ শতাংশ, ডিসেম্বরে তা ৯.১৫ শতাংশ হওয়ায় স্থিতিশীল ছিল বলা যায়। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ সামান্য কমার এই ঘটনা খাবারের দামও কিছুটা কমিয়েছে বলে বিবিএসের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। ডিসেম্বরে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৯.৪৬ শতাংশ হারে, আগের মাসের ১০.৫৮ শতাংশের চেয়ে যা কমেছে। এদিকে ডিসেম্বরে মজুরির হারও কিছুটা বেড়েছে। নভেম্বরের ৭.৭২ শতাংশ থেকে যা হয়েছে ৭.৭৪ শতাংশ।
রেমিট্যান্স: নতুন বছরের শুরুতে বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। জানুয়ারি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসীরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৯১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রবাসীরা দৈনিক ৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার করে পাঠিয়েছেন। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিন দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৭ কোটি ডলার।
আর নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে প্রবাসীরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ৭৯ কোটি ৪৪ হাজার ডলার।
পোশাক রফতানি: চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক রফতানি আয় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি আয় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৯১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২২ হাজার ৯৯৬ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার।
বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালে দেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৪৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বিজিএমইএ জানায়, বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই এসেছে পোশাক রফতানি থেকে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বছরভিত্তিক পোশাক রফতানি টার্নওভার হিসাব করলে ২০২৩ সাল পোশাক শিল্পের জন্য একটি ঐতিহাসিক বছর। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকট বিবেচনায় বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো করেছে। কারণ, বেশিরভাগ উন্নত দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লড়াই করছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন আর্থিক নীতি সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো ভোক্তাদের চাহিদার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।’
মহিউদ্দিন রুবেল উল্লেখ করেন, ২০২৪ সাল হবে পোশাক খাতের জন্য একটি পরিবর্তনের বছর।
এদিকে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা এবং সম্ভাবনা ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে—চলতি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ নামতে পারে। অবশ্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।
সদ্যবিদায়ী ২০২৩ সালে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। নতুন বছর তা বেশ খানিকটা কমে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে নামবে। ২০২৫ সালে সেটি আরও কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনটি ভালোভাবে হওয়ার কারণে সমাজে এক ধরনের স্বস্তি ফিরেছে। অর্থনীতির কয়েকটি সূচক ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া অর্থনীতি গতিশীল করতে সংস্কার কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়ন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফিসক্যাল পলিসি তথা রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন খরচ কমানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন না। এখন একটি সুষ্ঠু ভোট হয়ে গেলো, সরকার গঠন করা হয়েছে। এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস এসেছে। এতে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে মনোযোগ দেবেন।’