উত্তরাঞ্চলের তিন জেলায় শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে দ্বিতীয় দফার শৈত্যপ্রবাহে ছেদ ঘটালেও একদিনের ব্যবধানে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমেছে। এদিন সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। শনিবার যা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বুধবার সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ডের মাধ্যমে শুরু হয় এ অঞ্চলে ২য় দফার শৈত্যপ্রবাহ। এরপর থেকেই ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা।
উত্তরের জেলাগুলোতে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তর থেকে ছুটে আসা হিমশীতল বাতাসের কারণে তীব্র শীত অনুভূত হয়। তবে রোববার সকাল ৮টার দিকে সূর্যের দেখা মেলে। ঝলমলে রোদে স্বস্তি ফিরে আসে জনজীবনে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, ‘টানা পাঁচ দিন ধরে তেঁতুলিয়া এবং এর আশেপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। বুধবার সকাল ৯টায় চলতি শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ডের মাধ্যমে শুরু হয় ২য় পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ।’
তিনি জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তর জনপদের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এসব এলাকার ওপর দিয়ে শীতল হাওয়া অনবরত বয়ে যাওয়ায় কুয়াশা কমলেও শীতের তীব্রতা কমেনি।
এদিকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, তীব্র ঠান্ডায় কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকেলাহাট এলাকার কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সপ্তাহখানেক ধরে কাজকর্মে খুব অসুবিধা হচ্ছে। ফাঁকা মাঠে কাজ করাটাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। হাত-পা জড়ো হয়ে আসছে। কিছুদিন আগে কুয়াশায় কিছুই দেখা না গেলেও এত ঠান্ডা লাগেনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কুয়াশা কমেছে তবে বেড়েছে শীত। সারাদিন ঠান্ডা হাওয়া বইছে।’
একই এলাকার কৃষি শ্রমিক দেবারু বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া শীতল হাওয়ায় খেতে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ কাজের পর হাত-পা জমে যাচ্ছে, মাঠে থাকা কঠিন।’
ঠাকুরগাঁও শহরের মধ্য বয়সি রিকশাচালক ক্ষিতিশ বর্মণ বলেন, ‘শীতের মধ্যে রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়াও দিনভর বরাবরের মতো যাত্রীর দেখা মিলছে না। কারণ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এতে করে আয়ও কমে গেছে।’
শহরের খালপাড়া এলাকার আলেমা বিবি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে অনবরত ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করায় ২-৩টা কাঁথা কম্বল দিয়েও শীত নিবারণ করা যায় না।’ অন্যদিকে, এ অঞ্চলে শীতজনিত অসুস্থতায় শিশু ও বয়স্ক মানুষের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ জানান, ‘ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ বেডের বিপরীতে গড়ে ভর্তি থাকছে ১৫০ জন। প্রাপ্ত বয়স্কদের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকছে প্রায় ৩৫০ জন। যাদের অধিকাংশই শীতজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। অন্যদিকে বহির্বিভাগেও রোগীর অতিরিক্ত চাপ দেখা দিয়েছে।’ একই অবস্থা পঞ্চগড় সদর হাসপাতালেও বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম দাবি করেছেন, জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। প্রাপ্তিসাপেক্ষে আরও বিতরণ করা হবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ বলেন, ‘আকাশে মেঘ ও কুয়াশা কমে গেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এসব এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। আরও কয়েকদিন এসব এলাকায় এমন আবহাওয়া থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোববার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে প্রতিদিনের মতো রোববারও সকাল ৮টার মধ্যে সূর্যেরও দেখা মিলে।’