নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় দুই কোটির বেশি মানুষ বাস করে। এরমধ্যে দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ৫৫লক্ষ ভোটার রয়েছে। তারপরেও প্রতিবছর ঢাকায় ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কম থাকে। এর প্রধান তিনটি কারণের কথা বলছেন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার এতো মানুষ কিন্তু কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকে কেন? সে প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আগে বুঝতে হবে, ঢাকায় কারা থাকে? এরমধ্যে কতজন ঢাকার ভোটার।

ঢাকায় বেশিরভাগ মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকে। যাদের অনেকেই এখানকার ভোটার না। নির্বাচন রবিবার এবং তার আগের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় তিনদিনের ছুটিতে বেশিরভাগ রাজধানী ছেড়েছে। ঢাকার মোহম্মদপুরের বাসিন্দা রবিন সিকদার রংপুরের ভোটার। ছুটি পাওয়া গেছে বলে ভোট দিতে পরিবারসহ রওনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সচরাচর ভোট দিতে যাওয়া হয় না। এবার ছুটি পেয়েছি। আমার প্রার্থীও আছে। বন্ধু বান্ধব পরিবার নিয়ে একসাথে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’ ঢাকার তিতুমীর কলেজের কর্মচারী দিলীপ কুমার বিশ্বাস থাকেন মহাখালীর আমতলীতে। তার বাড়ি কুমিল্লা-৮ আসনের বরুড়ায়। তিনিও ভোট দিতে এলাকায় যাবেন। ঢাকায় তার পরিবারের তিনটি ভোট রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা তিনদিনের ছুটিতে রাজধানীবাসী গ্রামে চলে গেছে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতিবাচক প্রচারণা ও ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান এবং হরতাল ডাকায় নিরাপত্তা শঙ্কার জায়গা থেকে ভোটের হার ঢাকায় কম থাকতে পারে। মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা রেজানুর রহমান ফাঁকা রাস্তায় সকালের চা পান করছিলেন। ভোট দেবেন? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হরতালের মধ্যে কেন্দ্রে গিয়ে সুস্থভাবে বাসায় ফিরতে পারবো কিনা সেইটা ভাবছি। তারপরেও পরিস্থিতি বুঝে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’ তিনি বলেন, ‘ভোটে না এসে এভাবে হরতাল দিয়ে ভোট ঠেকানো কাপুরুষতার লক্ষণ।’

হকার সাইফুল বলেন, ‘ভোট দেওয়া আমার নাগরিক অধিকার, আমি সেটা জানি। কিন্তু পরিবারের কথাওতো ভাবতে হয়। কাজের চাপে মায়ের ওখানে যেতে পারি না। আমি ঢাকার ভোটার কিন্তু তাও ঢাকায় থাকতে পারছি না।’

ঢাকার আগারগাও এর নার্সারির কর্মী রাকিব শুক্রবার রাতে বাড়ি রওনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেসের কেউ নেই। সবাই যার যার এলাকায় চলে গেছে। ঈদের পর এমন ছুটি কম পাওয়া যায়। ভোট দিতে যাব বললে মালিকও নিষেধ করে না। দুদিন ছুটি বাড়িয়ে নিয়ে ৫দিনের জন্য বাড়ি যাচ্ছি।’ এলাকার ভোট আর ঢাকার ভোটে অনেক পার্থক্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভোট বুঝা যায় না। আমি এখানকার ভোটার না। এখানে কে কী প্রচার করলো তাতে আমার কী আসে যায়। এলাকায় গিয়ে শেষ দিনে প্রচারটা ধরতে না পারলেও সবাই বেশ আড্ডা দেওয়া হবে। ভোট ভোট উৎসব।’

ঢাকায় কারা থাকেন আর তারা উৎসবের সময় কোথায় যায় উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘ঈদের সময় কোটি মোবাইল সিম ঢাকার বাইরে যায়। তাদের কয়জন ঢাকার থাকেন। এ প্রশ্নের উত্তর পেলেই বুঝতে পারবেন কেনো ঢাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটার তুলনামূলক কম থাকে। গণমাধ্যমগুলোতে দেখলাম লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। তাদের মধ্যে অনেকে ঢাকার ভোটার। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে চলে যাচ্ছে। দুরকমেরই আছে, একদল ঢাকার ভোটারই নন আর আরেকদল ভোটার হলেও ছুটি কাটাতে ঢাকা ছেড়ে চলে যান ‘