মো. সাখাওয়াত হোসেন

নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তফসিল ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে নির্বাচনী আবহাওয়া তথা নির্বাচনকেন্দ্রিক উৎসব শুরু হয়েছে। দেশের প্রচলিত নিয়মের মধ্য থেকেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। শুধু তাই নয়, চলমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে, রাজনৈতিক দলসমূহকে কমিশনে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে, সংলাপ করেছে। তবে সেখানে কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে অগ্রাহ্য করেছে।আবার এই রাজনৈতিক দলগুলো আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত রয়েছে। অর্থাৎ, ব্যাপারগুলো কাকতালীয়ভাবে মিলে গিয়েছে।

আচ্ছা সম্মানিত পাঠক আপনারাই বিচার করবেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে পরীক্ষার সিডিউল ঘোষণা করা হয়। পরীক্ষার রুটিন নিয়ম অনুসারেই ঘোষিত হয়ে থাকে। সেখানে যদি কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে তার দায় কি কোনভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপর বর্তায়? নিশ্চয়ই নয়, কেননা নিয়ম মেনে সকলকে জানিয়ে, সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয় এবং সে প্রেক্ষিতে কোন শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষা কার্যাক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে কোনভাবেই তার দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের উপর পড়ে না। ঠিক তেমনিভাবে নির্বাচনী ট্রেনের সিডিউল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন, এখন যদি কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের ট্রেনে উঠতে অনিচ্ছুক হয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাহলে তার দায় কি কোনভাবে নির্বাচন কমিশনের উপর বর্তায়? অবশ্যই নয়, কেননা নির্বাচন কমিশন ডাকডোল পিটিয়ে টেলিভিশনে বক্তব্য প্রদান করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে। এখানে লুকোচুরি কিংবা কারচুপির কোনরূপ সুযোগ নেই। তথাপি কোন রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন কমিশনকে অগ্রাহ্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত থাকে তাহলে তার দায় নির্বাচন কমিশন নিবে না। এমনকি জনগণও কোন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকাকে চরমভাবে অপছন্দ করে।

জাতীয় নির্বাচনের বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয় ৫ বছর পর পর। সে জন্যই জনগণ জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের জন্য মুখিয়ে থাকে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের মোক্ষম এবং একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন। তৎপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলের অন্যতম অভিলক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। সুতরাং নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের মতামত যাচাইয়ের একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন। কাজেই যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না তাদেরকে নিয়ে জনসাধারণের কোন ধরনের আগ্রহ নেই তথাপি দলটিও সাধারণ জনগণের কল্যাণের ব্যাপারে উদাসীন হওয়ায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। যারা নির্বাচনী সিডিউল থেকে বাদ পড়েছে তাদেরকে আলোচনায় না রেখে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদেরকে নিয়েই জনগণের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে এবং অংশগ্রহণকারীদের জনগণ ভোট প্রদান করতে মুখিয়ে আছে।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে অদ্যাবধি নির্বাচন কমিশনের গৃহীত কার্যাক্রমে জনসাধারণ আশ্বস্ত হয়েছে যে কোন মূল্যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কমিশন বদ্ধপরিকর। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এর আনুকূল্যে নির্বাচন কমিশন তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিদের বদলি হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ইচ্ছানুযায়ী। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোন সুযোগ নেই কেননা কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখার লক্ষ্যে আচরণবিধি ইস্যুতে বিভিন্ন প্রার্থীকে শোকজ ও জরিমানা করছে কমিশন। আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মে আশ্বস্ত হয়েছে আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

নির্বাচনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পর্যাবেক্ষক ও দেশি বিদেশি সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকবেন। নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে নির্বাচনকে নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেই জন্য নির্বাচন কমিশন নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। পত্রিকার খবরে জানা যায়, দেশব্যাপী নির্বাচনের উৎসবে মেতেছে জনতা। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে জনতা মুখিয়ে আছেন। অবশ্য বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের খবরও চোখে পড়ছে। অর্থাৎ পক্ষ-বিপক্ষ প্রার্থীর কারণে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংস আচরণের খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নির্বাচনকালিন সময়ের সংঘাতের ঘটনা একেবারে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আরও সচেতন ও সজাগ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি। কেননা সংঘাত, সহিংসতা কোন পক্ষের জন্য সুখকর কিছু বয়ে আনতে পারেনি।

এ পর্যান্ত যত রাজনৈতিক দল এবং যত সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোটা দাগে কেউই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেননি। উল্লেখ্য, দেশের অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। বিশেষ করে প্রার্থীতা বাছাইয়ের সময় এবং প্রার্থীতা বাতিল ও প্রার্থীতা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলতে পারেননি। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কারোর কোনরূপ অভিযোগ নেই সেহেতু প্রার্থীদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা যে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন অত্যন্ত আন্তরিক ও অঙ্গীকারবদ্ধ। এ বিষয়টি সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনতার উচ্ছাস ও আবেগ দেখে মনে হয়েছে গণতন্ত্রের অব্যাহত ধারাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করবে এ দেশের আপামর জনসাধারণ । 

লেখক: চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।