নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় ড. ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা এই রায় দেন।

একই সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসামিদের জামিন দেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামিপক্ষ এক নম্বর আসামির বিষয়ে প্রশংসা সূচক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যেখানে তাকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা নোবেলজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই আদালতে নোবেল জয়ী ইউনূসের বিচার হচ্ছে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচার হচ্ছে।

সোমবার বেলা ১ টা ৪০ মিনিটে ড. ইউনুস আদালতে উপস্থিত হন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, তার স্ত্রী একটিভিস্ট রেহনুমা আহমেদ, রাজনীতি-বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, ব্যারিস্টার সারা হোসেন। দুপুর ২ টা ১৩ মিনিটে বিচারক এজলাসে উঠেন। এরপর ২ টা ১৫ মিনিটে ইউনুসের উপস্থিতিতে আদালত ৮৪ পৃষ্ঠার রায় পড়া পড়েন বিচারক।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ, শ্রমিক আইন লঙ্ঘন, কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করার কারণে শ্রমিকরা মামলা করেছেন। অভিযোগের সপক্ষে সব ধরনের তথ্যপ্রমাণ আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। শ্রমিকরা যাতে ন্যায্য বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করা লেবার কোর্টের দায়িত্ব। এই রায়ের মধ্যদিয়ে শ্রমিকরা নিজেদের ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

আদালত থেকে বের হয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে ইংরেজি বছরের প্রথম দিন। সারা দুনিয়া এটা পালন করে বছরের প্রথম দিন হিসেবে। এটা আনন্দের দিন হিসেবে সবাই উৎসব করে। যে দোষ করিনি, সেই দোষের শাস্তি পেলাম। এটাকে ন্যায়বিচার যদি বলতে চান, তাহলে বলতে পারেন।’

ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ড. ইউনূসসহ চারজন ন্যায়বিচার পাননি। মামলাটি করা হয়েছে হয়রানির উদ্দেশ্যে। উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে মামলার আইনগত বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আদালতে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলার আইনগত বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। ওইদিন যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। গত ৬ নভেম্বর এ মামলার বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। গত ৯ নভেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ এ মামলার চারজন আসামির ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। গত ১৬ নভেম্বর এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে।

এর আগে, গত ৬ জুন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের চার সাক্ষীর জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটি করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস এম আরিফুজ্জামান। মামলার নথি অনুসারে, আইএফইডি কর্মকর্তারা ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের অফিস পরিদর্শন করে শ্রম আইনের বেশকিছু লঙ্ঘন খুঁজে পান।

সেই বছরের ১৯ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির ৬৭ কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।

এ ছাড়া, কর্মচারীদের পার্টিসিপেশন ও কল্যাণ তহবিল এখনো গঠন করা হয়নি এবং কোম্পানির যে লভ্যাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা ছিল তার পাঁচ শতাংশও পরিশোধ করা হয়নি।