নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই একটি মিশনের কথা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন সামনে এসেছে। কোন মিশন সেটি উল্লেখ না করে প্রতিবেদন প্রকাশ করাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

 ‘‘পশ্চিমা একটি মিশনের প্রতিবেদন: ‘বিশ্বাসযোগ্যতার মোড়কে’ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হতে চলেছে’ এই শিরোনামে একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট হয়েছে যে ‘বিশ্বাসযোগ্যতার মোড়কে’ আয়োজিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও প্রশ্নবিদ্ধ হতে চলেছে। আর সরকার ‘বাংলাদেশে বিশেষ এই নির্বাচন কার্যক্রম বাস্তবায়নে মরিয়া।

মিশনের নাম উল্লেখ না করে এমন রিপোর্ট প্রকাশকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উল্লেখ করে বিশিষ্টজনরা। বলছেন, নির্বাচনের আগে আগে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করে মূলত নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ করার একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মিশনের নাম উল্লেখ করে এধরণের রিপোর্ট প্রকাশকে অস্বাভিক বরে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। এ ধরণের গায়েবি রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাটি সাংবাদিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 

তারা বলছেন, বিশেষ বিশেষ সময়ে প্রত্যেক দেশের দূতাবাস তার দেশকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে। তবে এই প্রতিবেদনের মূল কপি পেলে দেখা যেতো আসলে কি লিখা হয়েছে। কিংবা পত্রিকাটি কিছু বাড়িয়ে লিখেছে কি না।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, পুরো প্রতিবেদন পেলে মন্তব্য করা যেতো। তবে এটা অস্বাভাবিক কিছু না, প্রত্যেক দেশের দূতাবাস অর্থাৎ বাংলাদেশে কর্মরত রাষ্ট্রদূত তার দেশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অন্যান্য পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। এটা একটা রুটিন ওয়ার্ক।

সে রুটিন কাজের মধ্যে তারা যেভাবে চিন্তা করেন সেভাবেই তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। কখনও কখনও এই সকল মতামতের ভিত্তিতে যে দেশের রাষ্ট্রদূত রিপোর্ট পাঠান সেই দেশ সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তবে এটিই একমাত্র না, পশ্চিমা যে দেশের কথা বলা হয়েছে আমি জানি না সেটি কোন দেশ। সেই দেশ শুধুমাত্র তার রাষ্ট্রদূতের রিপোর্টটি তারা দেখবেন। কিন্তু তাদের অন্যান্য সোর্স আছে। সেসব সোর্স থেকেও তারা রিপোর্ট সম্পর্কে অবহিত হবেন। 

তিনি বলেন, ‘যেমন ১৯৭১ সালে কিংবা ১৯৭৫ সালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে যেসব রিপোর্ট তাদের দেশে পাঠাতেন সেই সবগুলো রিপোর্ট এখন ফ্ল্যাশ হচ্ছে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূতরা তাদের দেশে রিপোর্ট পাঠান তাতে দেখা যায় যে, তারা সবটুকু গ্রহণ করেন কিংবা করেন না। ১৯৭১ সালে ঢাকাস্থ মার্কিন কনস্যুলারের যে অফিস ছিলো সেই অফিস পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে যেসব রিপোর্ট পাঠিয়েছিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট সেটা গ্রহণ করেনি। তারা অন্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। কাজেই আমি এটাতে উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু দেখি না। ’

এক প্রশ্নের জবাবে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘এটার দুই রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। একরকম ব্যখ্যা হলো যে, তাদের কূটনৈতিক রিপোর্টার যে তার ব্যক্তিগত সোর্স সেদিক থেকে তিনি বের করেন,সেটা তার সাফল্য। আবার অনেক সময় এইটাও হয় যে, কোনো কোনো দেশ তাদের বিশেষ পছন্দের কোনো কোনো পত্রিকায় এটা লিক করাতে চায়। এটা দুই রকমই হতে পারে। যেমন ধরেন আফগানিস্তানে যখন ওসামা বিন লাদেন তৎপর ছিলেন তখন তার সব খবর আল জাজিরা পেতো। অন্য কোনো টেলিভিশন এটা পেত না। তখন ধারণা করা হতো যে, ওসামা বিন লাদেন আল জাজিরাকে পছন্দ করে এবং ট্রাস্টেট মিডিয়া হিসেবে চিন্তা করে এবং তার মাধ্যমেই প্রকাশ করে। তবে কতগুলো বিষয় অপরিস্কার আছে। পুরো রিপোর্ট পেলে এটা পরিস্কার হতো এবং ধারণা পাওয়া যেতো ‘

রাজনৈতিক বিশ্লেষক লে জে (অব) আবদুর রশীদ মনে করেন কোন মিশন বা বিদেশি প্রতিবেদন দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বুঝতে চাইলে সেটি পক্ষপাতদুষ্ট হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন নির্ধারিত গতিতে জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমানভাবে নির্বাচন কমিশন তার কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভোটে যোগদানের আবহ দেখে মনে হয়, নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এরকম পরিবেশ যখন তৈরি হয়েছে তখন যারা নির্বাচন নিযে খেলতে চাচ্ছে তারা খেলতে চাইবে।  কেননা নির্বাচন বিএনপি ছাড়াই এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না, দৃশ্যমানভাবে অবাধ সুস্ঠু নিরপেক্ষ হবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর উৎকট তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না লবিস্ট প্রভাবিত হয়ে কাজ করে অর্থের বিনিময়ে। এখানে মিশন কি বললো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোন একটি রাজনৈতিক দল ভোট না দেবার যে ডাক দিয়ে যাচ্ছে সেটা সফল হওয়ার লক্ষণ নেই দেখে নিউজ ম্যানুফাকচারিং করার চেস্টা করেছে বলে আমার মনে হয়েছে।’