নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির কোনোটাই মানছেন না খোদ দলটির নেতাকর্মীরা। তারা নিয়মিত আদালতে হাজির হচ্ছেন, মামলা লড়ছেন, জামিন প্রার্থনাও করছেন। হাজিরা না দিলে ‘ঝামেলায়’ পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এছাড়া বিএনপির আইনজীবীরাও আদালতে হাজিরা বা শুনানি করছেন। হুট করে এমন কর্মসূচিতে বিএনপির ভেতরে বাইরে নানা আলোচনা হচ্ছে।
বুধবার আদালত চত্বর ঘুরে দেখা যায়, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে অন্যান্য মামলার মতো রাজধানীতে নাশকতা, ভাঙচুর ও পুলিশের হামলার ঘটনায় বিভিন্ন থানার মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আদালতে হাজিরা দিতে এসেছেন। যার যে আদালতে হাজিরা সেই আদালতের সামনে নেতাকর্মীরা হাজিরা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। কথা হয় বিএনপির বংশাল থানা এলাকার নেতা মো. হ্যাপির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বংশাল থানাসহ নানা থানায় মোট ১৪৩ মামলার আসামি আমি। রাজনীতি করি বলে কিছু হলেই আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেয়। মাসের প্রতিটা দিনই আমার এসব মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হয়। অসহযোগ আন্দোলন চলছে তাও হাজিরা দিতে আসছি। কারণ না আসলে ওয়ারেন্ট হয়ে যাবে। এতে ঝামেলা বাড়বে। পরিবারের ওপর চাপ পড়বে।’
আদালতে হাজিরা দিতে আসা মো. জনি নামে বিএনপির আরেকজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থানায় আমার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে। ২০১১ সাল থেকে আমার মামলা চলছে। হাজিরা না দিয়ে উপায় নাই। হাজিরা দিতে না আসলে রাত পেরোতে না পেরোতেই সকালের মধ্যে ধরে নিয়ে আসবে।’
বিএনপির শত শত নেতাকর্মী আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। তারা সবাই গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে দলের নেতাকর্মীদের হাজিরা না দেয়ার নির্দেশনা মানতে পারছেন না বলে জানান। এছাড়া বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে মামলা লড়ছেন। নেতাকর্মীদের হাজিরা বা জামিন শুনানি করছেন তারা। তবে এ বিষয়ে কোনো আইনজীবী মুখ খুলতে নারাজ।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখছি বিএনপির হাইকমান্ড যে ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তা নেতাকর্মীরা মানছে না। তারা আদালতে এসে হাজিরা দিচ্ছেন। বিএনপির আইনজীবীরাও আদালত করছেন। আসামিদের হাজিরা দিতে নিষেধ করার সিদ্ধান্ত হটকারি। এর ফলে ওই আসামিরা পলাতক হয়ে যাবেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবে।’
ঢাকার সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর পাঁচ থানার তদন্তাধীন পৃথক পাঁচ মামলায় বিএনপির ১০২ নেতাকর্মী আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। তবে আদালতে উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আরও ৪১ নেতাকর্মী সময়ের আবেদন করেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের কদমতলী থানার নাশকতার মামলায় ১৯ নেতাকর্মী হাজিরা দিয়েছেন। এ মামলায় আরও ৯ নেতাকর্মী সময়ের আবেদন দেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ আবেদন মঞ্জুর করেছেন। শাহ আলী থানার নাশকতার মামলায় ৪৭ নেতাকর্মী হাজিরা দেন। এ মামলায় ২৪ জন সময়ের আবেদন করেন। অন্য ১৯ আসামি কারাগারে রয়েছেন।
গত ২০ ডিসেম্বর সরকারের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আজ থেকে আদালতে হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের প্রতি সুবিচার করার আদালতের স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদী এই সরকার কেড়ে নিয়েছে।’ তবে এ নির্দেশনা না মেনে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে দেখা যায়।