নিজের পায়ে ঘুরে দাঁড়াতে সারাদিন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন নীলফামারীর ফাতেমা আক্তার বন্যা (৪০)।
সে নীলফামারী সদরের সোনারায় ইউনিয়নের সোনারায় দারোয়ানী গ্রামের সুতাকল এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী। তার তিন মেয়ে আছে। দেড় যুগ আগে স্বামী মিজানুর রহমান দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকা শহরে চলে যান। এ ঘটনায় তিন মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়ে ফাতেমা। মেয়ে যেন তার ভাগ্যে কাল হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের নিয়ে ফাতেমা জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বর্তমানে সে একজন সফল নারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার বাড়ী জেলা শহর থেকে দক্ষিনে ১০ কিলোমিটার দুরে দারোয়ানী সুতাকল এলাকায়।
স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যাওয়ায় তিন মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে বেকায়দায় পরে বন্যা। সে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে ২০০৫ সালে অন্যের বাড়ীতে কাজ করার জমানো টাকা দিয়ে একটি পুরনো ভ্যান গাড়ী কিনেন। কিন্ত ভ্যানে যাত্রী কম হয়। তাই রোজগারও কমে যায়, তখন তিনি শুরু করেন ভ্রাম্যমান দোকান (ব্যবসা)। সেই দোকানে রয়েছে মেয়েদের কসমেটিক, ছোট ছেলে মেয়েদের স্যালোয়ার কামিজ, ছোটদের খেলনাসহ হরেক রকমের মালামাল।
এগুলো গ্রামগঞ্জে ও শহর ঘুরে বিক্রি করেন তিনি। তিনি জানান, বেচা কেনাও ভাল হয়। ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, নিজে খেয়ে পড়ে চলেন ও বৃদ্ধা বাবার যাবতীয় খরচসহ দেখা শুনা করেন। নিজস্ব ভিটে মাটি নেই তার। অন্যের এক শতাংশ জমির উপর কোন রকমে একটি ঝুঁপড়ি ঘর করে বসবাস করেন। তার একমাত্র সম্বল ভ্যান গাড়িটি।
ওই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল বারেক বলেন, ওই নারী প্রায় দেড় যুগ ধরে নিজেই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। ভ্যানের আয় দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন বৃদ্ধা বাবাকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। এটা ভাবতে অবাক লাগে। অন্য নারীরা ঘরে বসে না থেকে বন্যার মতো এই পেশা হাতে নিলে সংসারে কোন অভাব থাকবে না। আমরা বন্যাকে স্যালুট জানাই। ফাতেমা এখন এলাকার একটি পরিচিত নাম।
একই এলাকার মোস্তফা বলেন,স্বামী মিজানুর রহমান তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ঢাকায় পালিয়ে যান। তখন মেয়েদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য এই পেশা বেঁচে নেন ফাতেমা। আজ সে ভ্যান চালিয়ে অভাবের সংসারে নিজের পায়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই বন্যার মতো অন্য নারীরাও এগিয়ে আসুক। এখন ভালমন্দ অনেক লোক আসে তার সাথে কথা বলতে। তার জন্য গ্রামটি এখন পরিচিতি পেয়েছে।
এ বিষয়ে ফাতেমা আক্তার বন্যা বলেন, তিন মেয়েকে রেখে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকায় পালিয়ে যান। তখন সংসার চালানো, মেয়েদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। কোন কুলকিনারা না পেয়ে বেঁচে নিয়েছি ভ্যান চালানো পেশা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরুষরা যদি পারে আমি কেনো পারবো না, এ জন্য সাহস করে ভ্যান হাতে নিয়ে আজ আমি সংসারের হাল ধরতে পেরেছি। চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও আজ পর্যন্ত কোন সরকারী সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।
সোনারায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন শাহ জানান, ফাতেমা আমার ইউনিয়নের সুতাকল এলাকায় তার বাড়ী। সে একজন পরিশ্রমী নারী। সংসারের হাল ধরতে ওই পেশা বেঁচে নিয়েছে সে। আমি তাকে আমার পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে থাকি। বর্তমানে সে ভালভাবে সংসার চালিয়ে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। আশা করি, সুবিধা বঞ্চিত অন্য নারীরা তাকে দেখে অনুপ্রেণিত হবে। কারণ ফাতেমা মানুষের বাড়ীতে ঝিঁয়ের কাজ না করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। সে সমাজের একজন সফল নারী (মডেল)।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি নতুন এখানে যোগদান করেছি, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।