নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে লড়ছেন। যেসব আলোচিত হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি, তারাই এই প্রতীক বেছে নিয়েছেন। প্রার্থীরা জানান, ঈগলকে শক্তি, সামর্থ্য ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সাধারণ মানুষের কাছে বেশি বোধগম্য হওয়ায় ঈগল প্রতীক নিয়েছেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ১৮৯৫ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ৩৮২ জন। তাদের মধ্যে ১৫২ জন প্রার্থীই ঈগল প্রতীক বেছে নিয়েছেন।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মোট ১৭ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন। এরমধ্যে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন সাত জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হেভি-ওয়েট যেসব প্রার্থী রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, সিলেট-৩ আসনে ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেট-৬ আসনে সরওয়ার হোসেন, সিলেট-৫ আসনে আহমদ আল কবির। এছাড়া হবিগঞ্জ-১ আসনে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, গাজী মোহাম্মদ শাহেদ, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের ড. জয়া সেনগুপ্তা, হবিগঞ্জ-৪ আসনে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
অন্যান্য জেলার মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনে মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, ফরিদপুর-৩ আসনে ব্যবসায়ী নেতা এ কে আজাদ, ফরিদপুর-১ আসনে আরিফুর রহমান দোলন, ফরিদপুর-২ আসনে জামাল হোসেন মিয়া, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, বরিশাল-৪ আসনে পঙ্কজ দেবনাথ, জামালপুর-৪ আসনে ডা. মুরাদ হাসান, চট্টগ্রাম-৩ আসনে জামাল উদ্দিন চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১২ আসনে শামসুল হক চৌধুরীও ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
বরিশাল-৪ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেও দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি। তবে ঈগল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তিনি বলেন, ‘ঈগল হচ্ছে শক্তি ও সাহসের প্রতীক। সে তার তীক্ষ্ণ নজর এবং টার্গেট কখনো মিস হয় না। সেকারণেই আমরা ঈগলটা বেছে নিয়েছি।’
হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ঈগল প্রতীক বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য যেসব মার্কা বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল তার মধ্যে ঈগলটাই তার কাছে মানসম্পন্ন মনে হয়েছে। তাছাড়া ঈগল একমাত্র পাখি যেটি ঝড়-তুফানের উপরে উঠে যায়। অন্যান্য পাখি ঝড়-তুফানের সময় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়, সে তখন উপরে উঠে যায়। সুতরাং ঝড়-তুফান তার কিছু করতে পারে না। খুব নির্ভুল জিপিআরএস এর মতো সে তার নিশানা বা টার্গেট ধরে সেটাকে ধরতে পারে। এই প্রতীকের মধ্যে একটি ভাল মেসেজ আছে বলে আমার মনে হয়।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং এদের সবার প্রতীকও নির্ধারিত। এসব প্রতীকে এই দলের মনোনীত প্রার্থী ও তাদের জোটপ্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। স্বতন্ত্র কোন প্রার্থী এসব প্রতীক বেছে নিতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ২৫টি প্রতীক নির্বাচন কমিশনে বিধিবদ্ধ করা আছে। এর মধ্য থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের ইচ্ছামতো প্রতীকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এসব প্রতীকের মধ্যে রয়েছে, কলার ছড়ি, কেটলি, খাট, ঘণ্টা, ট্রাক, তবলা, তরমুজ, দালান, ফুলকপি, বাঁশি, বেঞ্চ, বেলুন, মাথাল, রকেট, স্যুটকেস, আলমিরা, থালা, ঢেঁকি, চার্জার লাইট, মোড়া, কাঁচি, ফ্রিজ, সোফা, দোলনা, ঈগল। যদি কোন আসনে একই প্রতীকের জন্য একাধিক প্রার্থী আবেদন করে তাহলে লটারির মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসার প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।