নিজস্ব প্রতিবেদক

“শেষ লড়াইয়ে” জিততে পুরোনো বন্ধুকে আড়াল থেকে বাইরে বের করতে চাইছে বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে আড়ালের সম্পর্ক রেখে আন্দোলন সফল করা যাবে না- এই বিশ্বাস থেকে জামায়াত-বিএনপি সম্পর্ক এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা কখনোই আলাদা ছিলো না। “কৌশল” হিসেবে বিএনপি জামায়াত বিচ্ছিন্ন হয়েছে দাবি করে জনগণকে ভুল বুঝাতে চেয়েছিলো। একইসঙ্গে জামায়াত প্রকাশ্যে সঙ্গে থাকলে অন্য “ছোট দলগুলো” বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হতো না বলেও দুরত্বের নাটক করতে হয়েছে বলেও মত দেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি নানা রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ কষে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ফের সম্পর্ক ‘পুনর্মূল্যায়ন’ করতে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির একপক্ষ মনে করছে, জামায়াতের দিক থেকেও পারস্পরিক সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনার চাপ আছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে যে শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে জামায়াতের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ দেখালেও তা দিয়ে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল হয়নি।

দলটির নেতারা বলছেন, পরিস্থিতিই তাদের এক মঞ্চের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে অনেকে জামায়াতের বিষয়ে আপত্তি তুলতে পারেন। তবে আগে দেশ বাঁচাতে হবে। এখনই এক হতে না পারলে কেউ বাঁচতে পারবে না। ভোটাধিকার আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যারাই আন্দোলন করছেন, তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত মাঠে একই রকম কর্মসূচি দিচ্ছে। সেটা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারণ করছি। আন্দোলন আরও জোরদার করতে হলে কাছাকাছি থেকে আন্দোলন করা যায়, সেই বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছি।’ 

আলাদা কিন্তু একসাথে

২০১৮ সালের পর নানাভাবে যোগাযোগ-বিচ্ছিন্নতা ও প্রকাশ্য জোটগত অবস্থান না থাকলেও গত মে মাসের পর থেকে আবারও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ শুরু হয়। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির উচ্চ পর্যায়ের দুই নেতার সঙ্গে জামায়াতের একাধিক নেতার আলাপ হয়। জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সেসময় বিএনপির দুই সিনিয়র দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে জামায়াতের একাধিক নেতার বৈঠক হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতির ভিত্তিতেই উভয় পক্ষের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মূলত ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী দল হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক জোটবদ্ধতার বিষয়টি বিবেচনায় নেন বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। সেসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত নেতাদের অপরাধ প্রমানিত হওয়ার কারণে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছিলো। সম্পর্ক প্রকাশ্য থাকলে বিএনপি রাজনীতিতে টেকা নিয়ে সংশয় হয় কিনা সে প্রশ্ন ছিলো দলের ভেতরেই। পরবর্তীতে বেশকিছু বছর তারা কর্মসূচি আলাদা আলাদাভাবে দিলেও পালন একইসঙ্গে করেছে।

ইমেজ রক্ষায় কতগুলো বছর জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন দেখিয়েছে বিএনপি উল্লেখ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘আমি সবসময়ই বলি, ওরা এক মায়ের পেটের সহদর। তারা আলাদা আলাদা দেখাতে চেয়েছে, ভুল বুঝাতে চেয়েছে। যখন আবার ধ্বোসাত্মক কাজের দরকার পড়েছে তখন আবার একসাথে হয়েছে।’