সৈয়দ মো. সিয়াম
ক’দিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাঙালি জাতি বরাবরই উৎসবমুখর জাতি। আর আমরা শুধু উৎসবের জন্য উপলক্ষ খুঁজে বেড়াই। আর উপলক্ষ পেলেই প্রতিটি উৎসবকে মহোৎসবে পরিণত করার জন্য বাঙালি হয়ে ওঠে মাতোয়ারা।
সারাদেশে এ মুহূর্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার একই সূত্রে গাঁথা। ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। আর এই অধিকার আদায় তথা পূরণের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। তা পূরণে সরকারের প্রতিটি সংস্থাসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল সমূহ কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার এক্ষেত্রে সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ন রেখে জাতিকে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে যুগপৎ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
উৎসব তখনই সার্থক হয়ে ওঠে যখন তাতে সব ধরনের লোকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। আর তাতে নতুন মাত্রা যোগ করে তরুণ তথা নতুন ভোটাররা। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৫ লক্ষ ৪০ হাজার ১৯৩ জন এবং মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি।
সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে ভোটের দিনের। মাঠে চলছে সাজ সাজ রব। ১৭ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হলেই শুরু হয়ে যাবে মূল উৎসব। জাতীয় উৎসবে যেমন সব শ্রেণি—পেশার মানুষ একযোগে অংশ নেয়, তেমনই ভোটের মাঠেও যোগ দেবে সব বয়সের, সব শ্রেণির, সব পেশার মানুষ। গ্রামে, বাজারে, রাস্তায় মিছিলে যোগ দেয় আবালবৃদ্ধবনিতা। দলমত নির্বিশেষে মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে নির্বাচনের সময়।
সবখানেই চলতে থাকে উৎসবের আমেজ। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যায় শহর, বন্দর, গ্রাম। ব্যানার—পোস্টার দুলতে থাকে রাস্তায় বাঁধা রশিতে। চায়ের দোকানে, মসজিদ—মন্দিরের আঙিনায় জমে ওঠে আড্ডা। যার যার পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট প্রার্থনা করেন প্রার্থীর সমর্থক গোষ্ঠী। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে জনে জনে ভোট চান প্রার্থীরা। মাঠে, ময়দানে, রাস্তার মোড়ে চলে জনসভা—বক্তৃতা।
বাড়িতে বাড়িতে চলে উঠান বৈঠক। এগুলো বাংলাদেশের চিরচেনা ছবি। এসব ছবি এ দেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। আর এই উৎসব সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই সংসদ—সদস্য বা এমপি নির্বাচনের যে প্রথা চলমান রয়েছে, তা একদিকে জনমনে যেমন প্রভাব ফেলে, তেমনই নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও দায়বদ্ধ করে তোলে মানুষের তথা সমাজের প্রতি। আর এভাবেই রাজনীতি তার বৃহৎ কাজটি সম্পন্ন করে এসেছে বছরের পর বছর।
তবে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আগে যে উৎসব ছিল মাঠে ময়দানে সীমাবদ্ধ এখন সেই পরিচিত গণ্ডি পেরিয়ে প্রবেশ করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে, টেলিভিশন তথা আকাশ সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভোটের রাজনীতি।
আর এই নতুন মাত্রার স্মার্ট প্রচারণার সাথে পরিচয় ঘটানোর পেছনেও রয়েছে বর্তমান সরকারের ভূমিকা, বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। প্রযুক্তি প্রত্যেকের হাতের নাগালের মধ্যে।
সবাই নিজ নিজ সামাজিকমাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে পারে, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও সনাতন পদ্ধতির সাথে চালু হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন।
ভোটের উৎসবের সঙ্গে যুক্ত থাকে দেশপ্রেম; উৎসবে ভোটের মাঠে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেন জনপ্রতিনিধিরা। আর এটিই হলো রাজনীতির মাধ্যমে সমাজ—উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
রাজনীতি হলো দেশের উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম এবং মহাসড়ক। দেশের উন্নয়ন কাজের পেছনে রয়েছে রাজনীতিবিদদের ভালোবাসা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ভূমিকা।
ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনগণ যে রায় দেন, তার ভার বহন করেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। কেননা, তারা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তারা ভোটের রাজনীতিকে ভালোবেসে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন প্রতিনিয়তই।
কেননা, তাকে যে আবার পরবর্তীতে আবার জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে, তাই তারা জবাবদিহিতার জন্য তৈরি হতে থাকেন। এভাবে ভোট উৎসব একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে এক নির্বাচন থেকে অন্য নির্বাচনে সম্প্রসারিত হতে থাকে।
অপরদিকে প্রতিক্রিয়াশীল কিছু গোষ্ঠী সবসময়ই চায় দেশের চলমান গণতান্ত্রিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে। তারা কখনোই চায় না দেশ এগিয়ে যাক। তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্বাচনে অংশ না নেওয়াসহ নানাবিধ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াতেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তারা নিজেরাই জানে না তার এর মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
কেননা জনগণ এখন অনেক বেশি অধিকার সচেতন। বিশেষ করে তরুণ সমাজ যারা সঠিকভাবে সবকিছু নিজেদের বিবেক দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে। যারা নিজেদের অধিকারকে কোনো কিছুর বিনিময়ে বিক্রি হতে দেয় না।
আর তারা খুব ভালো করেই জানে রাজনীতির ধারা ও পট—পরিবর্তনে কাজ করে ‘ভোট’ নামক এক নাগরিক অধিকার। আর এ অধিকার দিনে দিনে উৎসবে পরিণত হয়েছে—তা যেভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন।
ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তৎপর রয়েছে তারই ধারাবাহিকতাই কয়েকদিন বাদেই প্রশাসনিক কিছু রদবদল ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে।
যাতে কোনো পক্ষ অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে এবং ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিতে না পারে সেই জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছে। ভোটারদের মনে যেন বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। আনন্দ—উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।