নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার পতনের একদফা দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল ও অবরোধ দিয়ে আসছিল বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো। তবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আগামী রোববার অবরোধ বা হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত থাকবে দলটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে আজ মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত সারা দেশে ২৫৩টি স্থানে আগুন দিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। শত শত মানুষের দিন কেটেছে শঙ্কায়। আগুনে পোড়া মানুষ বার্ন ইউনিটে কাতরেছে দিনের পর দিন। যাদের কারণে জনগণের এই পরিণতি তাদের মুখে কোন মানবাধিকারের কথা শুনবে মানুষ?

নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হয়। দশম দফায় অবরোধের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।

যদিও অবরোধ হরতালের কোনো ছাপ ছিলো না এই দিনগুলোতে। শেষের দিন বৃস্পতিবার রাজধানীসহ সারাদেশে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সড়কে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মালবাহী ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপ ছিল বেশি। মোটরসাইকেল, সিএনজি ও রিক্সা চলাচল ছিল চোখের পড়ার মতো। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজকর্ম স্বাভাবিক ছিল। বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমলে ক্রেতাসমাগম ছিল লক্ষণীয়। ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার বাস। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সব মিলিয়ে অবরোধের কোনো লক্ষণ ছিল না রাজধানীতে। 

যানজটে বসে থাকা উবার চালক শফিক বলেন, এই অবরোধ দিয়ে আমাদের আয় বন্ধ হয়েছে। প্রথম কয়দিনের পরেই রাস্তায় গাড়ি নামাতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু পুরো সময়ই ভয় ছিলো কখন গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরকম টানা অবরোধ কখনোই জনগন সমর্থন করবে না।

অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, হরতাল অবরোধে এখন ফেসবুকে ইউটিউবে সীমাবদ্ধ। অবরধের ডাক দিয়েই শেষ। আমাদের গাড়ি চালানো দরকার, আয় দরকার, পরিবার চালানো দরকার।

কর্মসূচির ব্যর্থতা ঢাকতে স্কেপ রুট হিসেবে মানবাধিকার ইস্যু সামনে আনা হাস্যকর উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা অগ্নি সন্ত্রাস করে তাদের মুখে মানবাধিকারের গল্প শুনতে কেউ চায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতের এজেন্ডার সঙ্গে পশ্চিমের এজেন্ডা মিলে যাওয়ায় কবল তারাই মানবাধিকারের নামে এজেন্ডাভুক্ত গল্পগুলো শোনে। খালি চোখে দেখা যায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে তারা কী পরিমাণ জড়িত।’

তিনি আরওত বলেন, ‘গত এক মাসের হিসাব করলেই স্পস্ট হয়ে যায় সব। তারা অবরধ হরতাল দিয়ে তা সফল করতে না পেরে সেখান থেকে সরে আসার রাস্তা পাচ্ছিলো না। সে কারণে মানবাধিকার দিবসকে স্কেপরুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’