নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের তৈরি নিট পোশাকের (গেঞ্জি ধরনের) কদর বেড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে এই নিট পোশাক রফতানিতে প্রথমবারের মতো চীনকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এর আগে ইউরোপের বাজারে ডেনিম রফতানিতেও বাংলাদেশ চীনকে টপকে গেছে। এমনকি ২০২২ সালে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি বেড়েছে বাংলাদেশরই।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দফতর ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের নিট পোশাকের রফতানিমূল্য ছিল ৮৩১ কোটি ইউরো। একই সময়ে চীনের রফতানিমূল্য ছিল ৮২৭ কোটি ইউরো। গার্মেন্টস খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, চীন এখন লো-এন্ডের পোশাকপণ্য উৎপাদন করে না। অপরদিকে বাংলাদেশ এই খাতে শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলেছে। অবশ্য এই অর্জন সত্ত্বেও বাজারটিতে বাংলাদেশের নিট পোশাক রফতানি কমেছে ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বছরওয়ারি হিসাবে ১৭.৬৬ শতাংশ কমে মোট ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ইউরো হয়েছে।

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাকের রফতানি ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ওভেন পোশাকের রফতানি কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ। পাঁচ মাসে ১০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের নিট পোশাক রফতানি হয়েছে। এসময়ে ৭ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, গেলো মাস নভেম্বরে ওভেন রফতানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর নিটওয়্যার রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে নিট পোশাক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন ফরমাল পোশাকের চেয়ে ক্যাজুয়াল পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। পশ্চিমারা এখন ক্যাজুয়াল পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অধিকাংশই অফিসও করছেন এ রকম সাধারণ ক্যাজুয়াল পোশাকে।’ তিনি বলেন, আগামীতেও ওভেনের চেয়ে নিটের চাহিদা বাড়বে।

প্রসঙ্গত, নিট পোশাকের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট, পলো শার্ট, ট্রাউজার, সোয়েটার ও জ্যাকেট। আর ওভেন ক্যাটাগরির প্রধান পণ্যের মধ্যে রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, ডেনিম ও পার্টি ড্রেস, স্যুট ইত্যাদি।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও পোশাকের মোট রফতানি আয়ের মধ্যে নিটের অংশ ছিল ৫৪ শতাংশের বেশি, ওভেনে যা ৪৬ শতাংশের কিছু কম। শুধু তাই নয়, গত তিন অর্থবছরেই এ প্রবণতা দেখা গেছে পোশাক রফতানিতে। এর আগে টানা ২৬ বছর পোশাক রফতানিতে নিটের চেয়ে ওভেনের হিস্যা বেশি ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিটের চেয়ে ওভেনের রফতানি বেশি ছিল ১৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরগুলোতে এ ব্যবধান আরও বেশি ছিল। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১২০ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রফতানির বিপরীতে নিটের পরিমাণ ছিল মাত্র ২০ কোটি ডলার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওভেনের চেয়ে নিট পোশাক রফতানি বেশি হলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো। কারণ, ওভেনের চেয়ে নিটের স্থানীয় মূল্য সংযোজন বেশি হয়। নিটের মূল্য সংযোজন এখন প্রায় ৯০ শতাংশ। এর ফলে কাঁচামাল পরিমাণে আমদানিও কম করতে হয়। তাই দেশের অর্থ দেশেই থাকে। এ ছাড়া নিটের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প বেশ শক্তিশালী। এতে ব্র্যান্ড-ক্রেতাদের রফতানি আদেশ পাওয়ার পর স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে পণ্য তৈরি করা যায়। এতে লিড টাইমের সুবিধা পাওয়া যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট পোশাক রফতানির ৫০ শতাংশের বেশি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। তখন পোশাকের মোট রফতানিমূল্য ছিল ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতরের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিমূল্য ২৩.৩৩ শতাংশ কমে ৫৭৮ কোটি ডলারে নেমেছে।