প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূইয়া (অনি)

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা ছোট দুটি শব্দ হলেও এর গভীরতা ব্যাপক । বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক জীবন ও রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প দূর্বার গতিতে ছড়িয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু কিশোর বয়সেই তা উপলব্ধি করেন । ২৩ জুন ১৯৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি তথা ইংরেজদের শাসনের সূচনা হয়। সেই সাথে আবির্ভাব হয় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে শত্রুতামূলক বিভাজন ও ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িকতা।

বলা যায় ইংরেজরা তাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে ঘৃণ্য ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি অনুসরণ করে ভারতে প্রতিষ্ঠা করে অশুভ সাম্প্রদায়িকতা (অমর্ত্য সেন, ‘হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড: আ মেমোয়ার) । এই সাম্প্রদায়িকতার বিষ দশকের পর দশক ধরে আমাদের রাজনীতিতে প্রবেশ করানো হয়েছে । যখনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে গিয়েছে তখনি এদেশে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার কালো মেঘ ।

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতেই ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পারিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল। পলাশী যুদ্ধের ১৯২ বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন সাম্প্রদায়িক সমাজ কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ ।  শুরুতে দলের নাম ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থাকলেও ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য জাতির সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। তার অনেক আগেই ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করে ।

বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন- ‘আমি বললাম, এর (গণতান্ত্রিক যুবলীগের) কর্মসূচি হবে সাম্প্রদায়িক মিলনের চেষ্টা করা, যাতে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হয়, হিন্দুরা দেশ ত্যাগ না করে- যাকে ইংরেজিতে বলে ‘কমিউনাল হারমনি’, তার জন্য চেষ্টা করা। অনেকেই এই মত সমর্থন করল…।’ বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আরও লেখেন ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান বলে কিছু নেই,  সকলেই মানুষ ।’ ঐ সময়ে পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় কর্মী হয়েও বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক মানবতাবোধ হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন।

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি আরও বলেন- ‘ভারতবর্ষেও মুসলমান থাকবে এবং পাকিস্তানেও হিন্দুরা থাকবে। সকলেই সমান অধিকার পাবে। পাকিস্তানের হিন্দুরাও স্বাধীন নাগরিক হিসাবে বাস করবে। ভারতবর্ষের মুসলমানরাও সমান অধিকার পাবে। পাকিস্তানের মুসলমানরা যেমন হিন্দুদের ভাই হিসাবে গ্রহণ করবে, ভারতবর্ষের হিন্দুরাও মুসলমানদের ভাই হিসাবে গ্রহণ করবে।’

ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি যেমন প্রত্যাখ্যান করেছেন, তেমনি হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের সাম্প্রদায়িকতার সমালোচনাও করেছেন। আক্ষেপ করে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারে বাংলার মুসলমানরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, আর অন্যদিকে ইংরেজদের সঙ্গে অসহযোগিতার পথ ধরে মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ছিল। তাই মুসলমানরা ইংরেজদের সঙ্গে অসহযোগ করেছিল। তাদের ভাষা শিখবে না, তাদের চাকরি নেবে না, এই সকল ধর্মীয় গোড়ামি করেই মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছিল। এই হিন্দুরা আবার যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল তখন অনেকেই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে মরতে দ্বিধা করেনি। জীবনভর কারা ভোগ করেছেন তাদেরকে তাড়াবার জন্য। এই সময় যদি এই সব স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ত্যাগী নিঃস্বার্থ হিন্দুরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সাথে সাথে হিন্দু ও মুসলমানের মিলনের চেষ্টা করতেন এবং মুসলমানদের ওপর যে অত্যাচার ও জুলুম হিন্দু জমিদার ও বেনিয়ারা করেছিল, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন, তাহলে তিক্ততা এত বাড়তো না ।

হিন্দু নেতাদের মধ্যে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এবং নেতাজী সুভাষ বসু এ ব্যাপারটা বুঝেছিলেন, তাই তাঁরা অনেক সময় হিন্দুদের হুঁশিয়ার করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হিন্দুরা তাদের কথায় সেদিন কর্ণপাততো করেইনি বরং উগ্র হিন্দুবাদে বিশ্বাসীদের হাতে মহাত্মা গান্ধীকে জীবন দিতে হয়। তাই বলা যায়, ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ‘গণতান্ত্রিক যুবলীগ’ গঠনই ছিল সাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতির পরিবর্তে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি । 

অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় ১৯৫৩ সালে মুসলিম ছাত্রলীগের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। শুধু দলের অসাম্প্রদায়িক নাম দিলেই সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ রুখতে হলে অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধকে হৃদয়ে ধারণ করতে হয়, সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা ও উন্মত্ততার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে হয়, যা দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ১৯৪৬ সালে কলকাতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় । জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধু দাঙ্গাপীড়িত এলাকায় গিয়ে কাজ করেছেন, হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। ১৯৪৮ সালের দিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় সভা করে বেড়াতেন। এ সময় পরিবেশ এমন উত্তাল ছিল যে, যেকোনও সময় হামলা হতে পারতো। সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে উৎকণ্ঠিত হলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বলেন- ‘স্যার চিন্তা করবেন না, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। আর সে শিক্ষা আমি আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি’ ।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তানকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ ঘোষণা করা হলে বঙ্গবন্ধু এর তীব্র বিরোধিতা করে  পাকিস্তান শাসনতান্ত্রিক পরিষদে তার ভাষণে বলেন, ‘পাকিস্তান শুধু মুসলমানদের জন্য সৃষ্টি হয়নি ।’ ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানি শাসকদের মদতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, বিশেষ করে ঢাকায় একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। তখন বঙ্গবন্ধু তার অসীম সাহসীকতায় অনেক হিন্দু পরিবারকে তার নিজের বাড়ি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে আশ্রয় দিয়েছেন । বেগম মুজিব পরমযত্নে সবার খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এই যে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাজদের এমন সাহসের সঙ্গে কয়জন নেতা মোকাবিলা করেছেন? মুখে বলা সহজ, কিন্তু কাজে দেখানো কঠিন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যা বিশ্বাস করতেন, জীবনাচরণে তার প্রতিফলন তিনি দেখিয়েছেন । সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু  ছিলেন আপাদমস্তক ধর্মপ্রাণ। তবে সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি বর্জন করেছিলেন।

প্রকৃত ধার্মিক কখনও সাম্প্রদায়িক হতে পারেন না। ইসলামের এই মর্মবাণী বঙ্গবন্ধু হৃদয়ে ধারন করেছিলেন বলেই ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘…রাজনীতিতে যারা সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি করে, যারা সাম্প্রদায়িক, তারা হীন, নীচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে সে সাম্প্রদায়িক হতে পারে না।’। বঙ্গবন্ধুর এই নিরন্তর অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ চর্চা ও বাস্তবে তার প্রতিফলন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িকতাকে দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু যে মুক্তিসংগ্রাম করেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তার অন্যতম মূলমন্ত্রই ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ।

১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত করেছিলেন এবং মানুষ তা সাদরে গ্রহণ করেছিল । ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৬২ টি এলাকাভিত্তিক আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৬০ টি আসন এবং একই সাথে প্রাদেশিক পরিষদের মোট ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছিল ২৮৮ টি আসন । পক্ষান্তরে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি পেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ১৩৮ টি আসনের মধ্যে মাত্র ৮৩ টি আসন ।  বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষের মন বুঝতেন, তাই ধাপে ধাপে ১৯৪৬ থেকে শুরু করে ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল মানুষকে একটি স্বাধীন অসম্প্রদায়িক দেশের পরিনতির দিকে ধাবিত করতে পেরেছিলেন বলেই পৃথিবীর মানচিত্রে আজকে আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি । বঙ্গবন্ধু শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে আসা বাঙালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশেষ ইতিহাস ধরতে পেরেছিলেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণগুলোও বুঝতে পেরেছিলেন ।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ইংল্যান্ড ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন: ‘বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর এই রাষ্ট্রের ভিত্তি ধর্ম হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের তরফ থেকে কোনও রকম বৈষম্যমূলক আচরণ পরিহার করা।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম রাষ্ট্র যেখানে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। সকল ধর্মের মানুষ নিজ-নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন-ব্যভিচার এই বাংলাদেশের মাটিতে চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা চলবে না’।

মোদ্দাকথা, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির হাত ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে এদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি বিকশিত হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গড়ার কাজ শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ধারায় ফিরিয়ে নেয় সামরিক শাসকরা ও পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। দুর্ভাগ্য যে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রে’র নামে জিয়াউর রহমান ও তার মৃত্যুর পর খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল এবং পাকিস্তানের দোসর যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে বারবার পুনর্বাসিত করেন। দেশে শুরু হয় ধর্মের অপব্যবহারের রাজনীতি।

এর বিপরীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকারী আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময়ই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছেন, ‘এই দেশ হিন্দুর না, এই দেশ মুসলমানের না। এই দেশকে যে নিজের বলে ভাববে, এই দেশ তার। এই দেশের কল্যাণ দেখে যার মন খুশিতে ভরে উঠবে, এই দেশ তার। এই দেশের দুঃখে যে কাঁদবে এই দেশ তার। এবং এই দেশ তাদের যারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে’। বঙ্গবন্ধুর কন্যাও সেই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন– ‘এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে, সমান সুযোগ নিয়ে বসবাস করবে। অসম্প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন।

সম্প্রতি ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের এই ভয়াবহ দুর্দিনে ২৩ টি আরব দেশ, ৫৭ টি ইসলামী রাএবং ২০০ কোটি মুসলমান মিলে অবরুদ্ধ গাজায় মৃত্যুম্মুখ মুসলমানদের বাঁচাতে গত ২ মাসেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি । কেবল শেখ হাসিনা সরকার স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য মহান জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে। কয়েক বছর আগে ২০১৬ -২০১৭ সালে  মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয় দিতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিয়ে লাখ লাখ নির্যাতিত মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন ।

৭১-পূর্ব ও পরবর্তী (১৯৪৯ হতে অদ্যাবধি) দীর্ঘ ৭৪ বছরের আওয়ামী লীগের ইতিহাস এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১ম বার, ২০০৯-২০১৩, ২০১৪- ২০১৮, ও ২০১৯-২০২৩ মেয়াদে যথাক্রমে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বারের মত দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক নীতিকেই অনুসরণ করে মানবাধিকার, ন্যায্যতা ও ইসলামের পথকেই মুলত অনুসরণ করেছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন ।

লেখক: প্রফেসর, জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।