শিক্ষা সবার মৌলিক অধিকার হলেও দেশের প্রতিবন্ধীদের শিক্ষায় নেই পর্যাপ্ত সুযোগ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তার মান ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপযোগী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের বড় একটি অংশই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় ২০১৩ সালে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে’ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানে দেশের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী পরিবেশ ও ন্যায্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে বলা হয়। তবে সে আইনের ১০ বছর পরেও দেশের স্কুলগুলোতে এখনো তা চালু করা হয়নি।

আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রায় সব দেশেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মূলত প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য অধিকার ও সুরক্ষায় নিশ্চিত করাই এই দিবসের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার দিতে সীমিত পরিসরে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে ।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ৬৪টি জেলায় ৬৪টি সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে, কিন্তু আসন সংখ্যা মাত্র ৬৪০টি। এর বাইরে কেবল ৮ জেলায় পরিচালিত হয় শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়Ñ যার আসন সংখ্যা ৭২০টি। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামে রয়েছে দু’টি স্কুল। এছাড়া বেসরকারিভাবে পরিচালিত ৭২টি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দিতে হয় অধিদপ্তরেই। অন্যদিকে, দেশে সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ নেই।

১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা সুইড বাংলাদেশ। সুইডের মেন্টর জওয়াহেরুল ইসলাম জানান, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই দয়াদাক্ষিণ্য ও স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে চলছে। বিশেষ করে যারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, তাদের শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সীমিত। তার মতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনেই পরিচালিত হওয়া উচিত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯১-এ। ২০২২ সালের জনশুমারি প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৬০৪ জনের প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার কথা বলা হয়েছে। অটিজম, শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, বাক, বুদ্ধি, শ্রবণ, শ্রবণ-দৃষ্টি, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ও অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ২০১৩ সালে নতুন আইন করা হয়। তাদের বিষয়ে একাধিক নীতিমালাও রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইন ও নীতিমালা কাগজেই আটকে আছে, বাস্তবায়ন কম।

এছাড়া সীমিত সংখ্যায় শিক্ষার সুযোগ পাওয়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ইচ্ছা ও যোগ্যতা থাকার পরও জাপানি ভাষা বিষয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের উচ্চতর কোর্সে ভর্তি নেয়া হয়নি হৃদয় সরকার নামে এক শিক্ষার্থীকে। এমন বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়তে হয় যোগ্যতা থাকা প্রতিবন্ধীদেরও।