নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও সন্ত্রাস বন্ধে তরুণদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, `এদের (বিএনপি-জামায়াত) এভাবে যানবাহনে আগুন দিতে একটি শ্রেণি উৎসাহ দিচ্ছে। বিদেশি, বিশেষত ওয়েস্টার্ন কিছু রাষ্ট্রদূত। ঠিক নির্বাচনের আগে তারা অতিরিক্ত কথা বলা শুরু করে। কিন্তু বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল তারা (কিছু বিদেশি রাষ্ট্র) বলবে না। উল্টো আরও স্পেস দিতে হবে।
শুক্রবার রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানের ৫১ তম পর্বে তরুণদের মুখোমুখি হয়ে নিজের ভাবনা তুলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর প্রধান সজীব ওয়াজেদ। অনুষ্ঠানে তিনি তরুণদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে তরুণদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যদি আমরা জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে চাই, তাহলে সহজ সমাধান হলো বিএনপি-জামায়াতকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেন। সেটা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই আরেকটা উপায় আছে। সেটা হলো- নৌকায় ভোট দিন।’
এক তরুণ জানতে চান, ‘প্রতি নির্বাচনের আগেই বাস-ট্রাকে আগুন জ্বালানো হচ্ছে। এটি কী বন্ধ হবে না? শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমরা কবে পাব? একজন প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, সড়কে সহিংসতা তত বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সহিংসতাগুলো সামনের দিনে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে কি? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপির ভোটার যত কমতে থাকবে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস তত কমতে থাকবে। আপনারা যদি প্রতি নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দেন, তাহলে এখন যেমন জামায়াত বলে কিছু নাই, ভবিষ্যতে বিএনপি বলেও কিছু থাকবে না। আর সেইদিন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।’
সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এখন বিএনপি জামায়াতের জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির বিচার করতে গেলেও বিদেশিরা বলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাদের বাঁচাতে ব্যস্ত বিদেশিরা। আমি তরুণদের বলব, যারা বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে, তাদের কথা যখনই শুনবেন, প্রতিবাদ করবেন। বলবেন, জিয়াউর রহমান খুনি ও বিএনপি জঙ্গি দল, তাদের পক্ষে কেন কথা বলছো তোমরা? তোমরা বিদেশিরা মানবাধিকারের কথা বলছো, তোমরা বিদেশিরা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার আগে করো। তখন তোমাদের কথায় বিশ্বাস করব।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিনাবিচারে মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিচার নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন,‘ জিয়াউর রহমানের আমল আমাদের দেশের বিরাট একটা কালো দাগ ছিল। আজকে যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা এটা বলে না জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি তখন কত হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বিচার ছাড়া। তাদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায় না আজ পর্যন্ত। এই হলো বিএনপি। এটা কী গণতান্ত্রিক দল? না, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। এটা একটি খুনিদের দল। জিয়াউর রহমান স্বৈরাচার ছিল, জিয়াউর রহমান খুনি ছিল। আমরা বিচার করার চেষ্টা করছি। এটা একটা কঠিন বিষয়। কারণ, তখন থেকে অনেক রেকর্ডস নাই, তথ্য নেই। তারা তো সব মুছে ফেলেছে। যেভাবেই হোক, তাদের আমরা বিচার করার চেষ্টা করেই যাচ্ছি।’
বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও টলারেন্স লেভেল কমে যাচ্ছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর টলারেন্স লেভেল বাড়াতে পেরেছি। এর আগে রিলিজিয়াস টলারেন্স বলে কিছু ছিল না। বাংলাদেশ উল্টো পথে যাচ্ছিল। সেক্যুলারিজম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মৌলবাদী দেশ হবার পথে হাঁটছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে মৌলবাদী দেশে পরিণত হতে দেবে না। বাংলাদেশকে সেক্যুলার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা প্রদানের পর যা মনে হয়েছিল অবিশ্বাস্য, যে বিষয়টি নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছিলেন অনেকে। আজ ১৫ বছর পর তা করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এবার ২০৪১ রূপকল্পে তরুণদের জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভিশন নিয়ে আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে সজীব ওয়াজেকে নানা প্রশ্ন করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণরা। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ডিজিটালাইজড করা নিয়ে চিন্তা করছি না। বরং ভাবছি কোন কোন ক্ষেত্রকে আমরা পরিবর্তন করব, আরও আপগ্রেড করব। যেমন আমরা টার্গেট করেছি এআই এক্সপার্টিজ তৈরির। আমরা এআই তৈরি করব যা নিজেদের কাজে ব্যবহার করব। সেটা সরকারি কাজে কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন শুরু করি, বাংলাদেশে ডিজিটাল বলতে কিছুই ছিল না। ইন্টারনেটই ছিল না। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ছিল না। সরকারি কোনো কিছুই ডিজিটাল ছিল না। ডিজিটালের টার্গেট ছিল, প্রথমে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বানাতে হবে। সেটা আমরা করে ফেলেছি। এখন সবার হাতেই দেশজুড়ে ফোরজি ইন্টারনেট আছে। প্রতিটি ইউনিয়নে এখন ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। এখানে আপনাদের সবার হাতেই স্মার্ট ফোন রয়েছে। ডিজিটাল হয়ে গেছে। এরপর আমাদের পরবর্তী ধাপে যাবার পালা।’
এখন গবেষণার সময় জানিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এআই বা মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করব। আগে ইলেকট্রনিক যেগুলো বাংলাদেশ আমদানি করত, যা চায়না এখন এক্সপোর্ট করছে- যেমন মাদারবোর্ড, স্মার্ট ফোন বা এ জাতীয় পণ্যগুলো বাংলাদেশ রপ্তানি করবে। এটাই হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
এ সময় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘এআই কিন্তু এখনো সেই স্টেজে যায়নি, যেই স্টেজে গেলে তা দুনিয়া দখল করে ফেলবে। একেবারেই শেখার একটা পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞদের থেকেই এআই নিয়ে আমার মতামত একটু ভিন্ন। আমি মনে করি এআই শুধুমাত্র একটি টুলস। এটি আমাদের চাকরি, কাজ-কর্ম সব দখল করে নেবে এমন নয়। এটা আমাদের নিজেদের জীবনে, নিজেদের টেকনোলজিকে উন্নত করার জন্য ব্যবহৃত একটি টুল। এখন সোশ্যাল পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে বা কৃষি বিষয়ে জানতে ও অ্যানালাইসিস করতে এই টুলসটি আমাদের সাহায্য করে। তাই বর্তমানে আমি এআইকে মনে করি একটা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় টুলস হিসেবে। আর এ কারণেই স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা ৪টি বিষয়কে টার্গেট করেছি। তার মধ্যে একটি সেক্টর হলো এআই। বাংলাদেশ এআই-তে এক্সপার্টিজ ডেভলপ করবে। এটা একটা লক্ষ্য।’