বিশেষ প্রতিনিধি
নির্বাচন বর্জন করা চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের ডাকা সংলাপে বিএনপি ছাড়াও ডান এবং বামপন্থি দলগুলোও যোগ দিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচন বর্জন, সরকারের পদত্যাগ এবং রাষ্ট্র মেরামতে একই সুরে ঐক্যের কথা বলেছেন দলগুলোর নেতারা। চূড়ান্ত ডান মতাদর্শের টেবিলে কড়া বাম নেতাদের উপস্থিতি প্রশ্ন জাগিয়েছে জনমনে- বাম দলগুলো ধর্মীয় রাজনীতি মেনে এক কাতারে নামতে দ্বিধা করছে না কেনো? উপস্থিত হওয়া বাম নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সংলাপের দাওয়াতে অংশ নেওয়া হয়েছে, তাদের সাথে জোট হয়নি। যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘সরকারের জুলুম নির্যাতনে বাম, ডান সবাই আজ এক কাতারে চলে এসেছে।’
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদের উভয় অংশের মতো মধ্যপন্থি দলগুলো। ছিল জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী পরিষদের মতো বামধারার দল। ধর্মভিত্তিক দলের মধ্যে খেলাফত মজলিশ ছিল। জামায়াতে ইসলামী না থাকলেও দলটির সমর্থিত সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের প্রতিনিধি ছিলেন। যোগ দেয় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ। সংলাপে সভাপতিত্ব করা ইসলামী আন্দোলনের আমির তথা চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ১১ দফা তুলে ধরে তিন প্রস্তাব দেন।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। তিনি বলেন, ‘তিন বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী একসঙ্গে লড়াইয়ের ডাক দিলে একাত্তরের মতো জনগণ সরকারের বিপক্ষে নেমে আসবে।’
প্রথমবারের মতো ধর্মভিত্তিক দলের সভায় যোগ দেওয়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘দেশে আগুন লেগেছে বলেই প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ইসলামী ধারার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের বিষয়ে সংশয় দূর হয়েছে।
এধরনের ঐক্যে মতাদর্শ কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি করে কিনা প্রশ্নে সভা শেষে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, ‘অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সকল মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এখানে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী ঐক্যজোট বলে কোন ভোদাভেদ নেই। সকলের উদ্দেশ্য আন্দোলন সফল করা। যারা গণতন্ত্র চায় ও সংগ্রাম করতে চায় তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে একত্র হয়েছে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের পতন ঘটাতে কোন ভেদাভেদ সামনে আনছি না।’
ইসলামী শাসনতন্ত্র ব্যাপারটা বাম মতাদর্শের সাথে বিরোধপূর্ণ কিনা প্রশ্নে বাম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে ইসলাসী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নেই। বর্তমানে সংকট উত্তোরণে তারা সংলাপের আয়োজন করেছে, সেই সংলাপে আমাকে দাওয়াত দিয়েছে। আমরা যোগ দিয়েছি। দেশের বর্তমান দুর্যোগে আমরা তাদের সাথে জোট করছি না, ব্যানার করছি না, মোর্চা করছিনা। জামায়োতে ইসলামী ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোই আমরা রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছি।’
উল্লেখ্য, সংলাপে লিখিত বক্তব্যে তপশিল বাতিল করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি, সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সখ্যানুপাতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দেন চরমোনাইয়ের পীর।
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনা সংলাপে বক্তৃতা করেন সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি তথা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ড. খলিলুর রহমান মাদানী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, গণফোরামের একাংশের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মওলা রনি, এলডিপির মহাসচিব শাহাদত হোসেন, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহের, বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ, খেলাফত মজলিশের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান।