নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনে দল অংশ নিবে না জেনে সারাদেশের তৃণমূল নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি যেনো না নেয় সেকারণে নতুন ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেছে বিএনপি। সম্প্রতি দুই কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণের কথা জেনে তাদেরকে বহিস্কারের নির্দেশ দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তুণমূলের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিছু অর্জন হোক না হোক তারা স্থানীয়ভাবে নির্বাচনমুখী ছিলেন। চূড়ান্তভাবে দল নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে থাকলে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে যেতেই চাইবেন।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান এবং দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মো. আবু জাফরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে উক্ত দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বহিষ্কৃত উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা যায়। এদিকে আরেক বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শাহ মো. আবু জাফর গত ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দেন। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনি।
আগামী ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু দেশটির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় মাঠ পর্যায়ে এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কোন আমেজ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
শুরু থেকে আন্দোলনের সঙ্গে জেলা থানা পর্যায়ের নেতাদের দুরত্ব লক্ষ্য করা গেছে। ২৮ অক্টোবর সমাবেশের নামে হামলার ঘটনার পর বিএনপি আরও নড়বড়ে অবস্থানে পড়ে। তৃণমূলে একধরনের হতাশা দেখা যায়্ কেননা, গত কয়েকবছর ধরে তারা নির্বাচনমুখী হিসেবেই এলাকায় কাজ করে যেতে চেষ্টা করছিলো। তাদের জন্য এই নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত হতাশার।
আবু জাফর ও একরামুজ্জামানের বহিস্কারের মধ্য দিয়ে তৃণমুলে বার্তা দিতে চেয়েছে বিএনপি উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনমুখী ছিলেন নেতারা, এখনও আছে। তাদের নানারকম প্রস্তুতি আছে। দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দল হিসেবে বিএনপির দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং এলাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়ার বিষয়গুলো তাদের চোখের সামনে ঘটেছে। ফলে তারা নির্বাচন করতে চান। এটা কেন্দ্রীয় বিএনপি জানে। ফলে তারা চেয়েছে, শুরুতেই দু একজনকে বহিস্কার করে ভয়ভীতি তৈরি করে যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা ঠেকানো যায়।
তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি সহ যেসব দল নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে দ্বিধায় ছিল, তাদের অনেকেই এখন নির্বাচনের পথে হাঁটছে। বিএনপিসহ যেসব দলগুলো এখনও অনড় অবস্থানে আছে, তারাও যদি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় সেক্ষেত্রে তফসিলে কোন পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে কিনা প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, উনারা যদি আসতে চান বা ইচ্ছা প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে কীভাবে কী করা যাবে, নিশ্চয় আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। তবে আপাতত তফসিলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন।