সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২টাকা করে নির্ধারণ করা হয় সেই সময়, যখন বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকা ছিল। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথম ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়। এরপর থেকে ক্রমাগত কমে এখন ১০ টাকায় মিলছে প্রতি পিস ডিম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা বাজার ও এসব এলাকার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোর ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। অর্থাৎ ১০ টাকা পিস। পাইকারিতে দরদাম করে ১১৫ টাকাও কেনা যাচ্ছে। তবে, পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে এখনো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত একমাসে বাজারে ডিমের দাম সাড়ে ২১ শতাংশ কমেছে। গত মাসে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, যা এখন ৩৭ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত তিনমাস আগে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল ডিমের দাম। সেসময় থেকে ডিমের উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেন খামারিরা। যে ডিমগুলো এখন বাজারে আসছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন-ই পাইকারি বাজারে প্রতি একশো ডিমের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কমছে।
এদিকে, ফার্মের মুরগির সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। তেজগাঁও ডিমের আড়তের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, গতরাতে তারা প্রতি ১০০টি সাদা ডিম ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। আর বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ থেকে ৯২০ টাকায়।
মালিবাগের ডিম বিক্রেতা মুসা মিয়া বলেন, পাইকারিতে ১০০টি বাদামি ডিম কিনতে ৯২০ টাকার মতো লাগছে। যা পরিবহন ও অন্যান্য খরচ মিলে ৯৫০ টাকা পড়ছে। তাতে খুচরা বাজারেও ডিমের দাম বেশ কমে এসেছে। আর দাম কমার কারণে বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকায় বেঁধে দেওয়ার পরও দাম কখনোই এতটা কমেনি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। বেশ দ্রুতগতিতে ডিমের দাম কমছে বলে জানান তারা। বর্তমান ডিমের দামের দরপতনে খামারিদের লোকসান হচ্ছে বলেও জানান কয়েকজন।
বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে উল্লেখ করে তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, আমদানির কারণে ডিমের দাম কমেনি। এখন খামার থেকে প্রচুর ডিম আসছে, তাতেই দাম নেমে এসেছে।
এ খাত সংশ্লিষ্টরা আরও বলেছেন, আমদানিকারকেরা ডিম দেশে নিয়ে আসতে শুরু করায় স্থানীয় অনেক উৎপাদক দাম দ্রুত কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ডিমের দাম কমতে থাকলে আমদানিকারকেরা লোকসানের ভয়ে ডিম নিয়ে আসতে চাইবেন না। আমদানির ডিম যাতে না আসে, সেই বার্তাই দিতে চাইছেন তারা। কারণ উৎপাদনকারীরা চান না যে ডিম দেশে আমদানির পথ উন্মুক্ত হোক।