ড. হাসান মো. আল-ইমরান
বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি এবং সাধারণ মানুষের আস্থা একটি অপরটির পরিপূরক। ২০১০ সালের পর বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে এবং গণজাগরণের পাশাপাশি মানুষের আস্থা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের একটি নতুন দিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এরই ফলশ্রুতিতে রাজনীতি এবং সামাজিক পরিবর্তনের দিকে মানুষের আগ্রহ এবং অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক উন্নয়নের সূচক পর্যালোচনা করলে বিষয়টি অধিকতর দৃশ্যমান হবে—
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি, সড়ক ও পরিবহন, মানব সম্পদ খাতে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বাণিজ্যিক ক্ষেত্র, বিনিয়োগ এবং উৎপাদন। বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন ঘটেছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে স্বল্প আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সামাজিক খাতেও বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার প্রসার এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার মান সহজ হয়েছে ও বিনোদনের ক্ষেত্র বেড়েছে। নিম্নবিত্তদের আয়ের উৎস বেড়েছে ও অভাব দূরীভূত হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রয়াস দেখা গিয়েছে যাতে বাংলাদেশ উন্নয়নে অগ্রসর হতে পারে। ভারতের সাথে সম্পাদিত সীমান্ত সমঝোতা, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রণোদনা এবং একইসঙ্গে প্রধান ক্ষেত্রে মানব সম্পদের উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে ও পণ্য সরবরাহ সহজ হয়েছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের হাওয়াও বেশ দৃশ্যমান। এছাড়া সন্ত্রাস দূরীভূত হয়েছে ও জঙ্গিবাদ দমন করা হয়েছে। অপরাজনীতি দূরীভূত হয়েছে ও রাজনৈতিক সংঘাত কমে গিয়েছে।
উচ্চস্তরের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা, অবৈধতা, অপরাধ ও দুর্নীতির তদন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দোষীদের সাজা নিশ্চিত করা হয়েছে ফলে দুর্নীতি অনেকটাই কমে এসেছে।
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি মাধ্যমে রাজনীতি ও সমাজে পরিবর্তনের আভাস তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সমাজের মধ্যে চলমান ঘটনা এবং মন্তব্যের মাধ্যমে জনগণের বাক স্বাধীনতা ও মতামত সুরক্ষিত হয়েছে।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে প্রচুর পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। নতুন এবং উজ্জ্বল চরিত্রের সহযোগিতা এবং নতুন জনপ্রিয় শিল্পী হচ্ছে। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিও উন্নত হচ্ছে এবং নতুন ও আধুনিক ধারাবাহিক, গান ও মিউজিক ভিডিও এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মিউজিক উন্নত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ইভেন্ট এবং মিডিয়া ফেস্টিভ্যাল বাড়ছে। এগুলো ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনোদনে একত্রিত করতে সহায়ক হতে পারে, স্থানীয় শিল্প এবং শিল্পীদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশে ডিজাইন ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এখন বিশেষভাবে জনপ্রিয় এবং অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা জনপ্রিয় হচ্ছে এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যাপারে পরিবর্তনের হাওয়া এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতা সারা বিশ্বে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের এই প্রয়াসের ফলে বাংলাদেশে রাজনীতির উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষের আস্থা উন্নত হচ্ছে। তবে, এই উন্নয়নের মাধ্যমে সমগ্র জনগণের মাঝে জবাবদিহিতা এবং ন্যায্যতা তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সমাজের সমৃদ্ধি ও সংস্কার প্রতিনিয়ত হতে থাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশীল সমাজের আস্থা বিভিন্ন কারণে সহায়ক হয়ে থাকে। সুশীল সমাজ একটি দৃঢ় ও নিরাপদ সমাজের ব্যবস্থাপনার ওপর ভরসা করতে সক্ষম। সাধারণ মানুষের আস্থার সূচকগুলো নিম্নরূপ—
শিক্ষা খাতে মানব সম্পদ বৃদ্ধি এবং তাদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
অফিস ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে বর্ধিত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এটি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করেছে এবং তাদের জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছে।
সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো সামাজিক সেবা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি স্বাস্থ্য সেবা, সুরক্ষা এবং অন্যান্য আধুনিক সুবিধার সাথে জড়িত।
সুশীল সমাজের মধ্যে ধর্ম ও জাতির একতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক ও একাত্মতা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও জাতির মধ্যে সরকারের ওপর আস্থা বেড়েছে।
সুশীল সমাজের মধ্যে সংরক্ষণশীল সংস্কৃতি এবং মর্যাদামূলক আচরণের দরূণ সমাজের মধ্যে শান্তি, সহযোগিতা ও অভিবাদনের ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি পরিবর্তনের হাওয়ায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে, যা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনীতি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশে বৃহত্তর প্রজন্মের নতুন ও শক্তিশালী রাজনীতিক নেতৃত্বের আগমনের আভাস তৈরি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা পরিচালিত এইসব রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের কারণে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে রাজনীতির বিষয়ে একটি আস্থা তৈরি হয়েছে। এই নতুন নেতৃত্বের আগমনে রাজনীতি ও সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
ড. হাসান মো. আল-ইমরান, জার্মানি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত;
সহযোগী অধ্যাপক, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।