ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান
বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একজন মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর ৫৫ বছরের জীবনে ১২ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। বাঙালি জাতির মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বিসর্জন দিয়েছেন তাঁর সমস্ত সুখ, শান্তি এবং পারিবারিক কল্যাণ। দেশের জন্য শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে দুঃসাহসিক আন্দোলনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। মুলত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে সেই দেশটির তরুণ সমাজ। বঙ্গবন্ধু তাঁর গোটা তারুণ্যকেই উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে। এখন এই অর্জিত স্বাধীনতাকে রক্ষার দায়িত্ব বর্তমান তরুণ প্রজন্মের। এই দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে তরুণদের শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে এই ফিচার।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। বাংলার ইতিহাসের আন্দোলন-সংগ্রামে এ নামটি অবিভাজ্যভাবে জড়িয়ে আছে। যাঁর এক ডাকে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন সূর্যসন্তানেরা। তবে পরিতাপের বিষয় এই যে পাকিস্তানিরা যা করতে পারেনি, কিছু দুর্নীতিবাজ সামরিক কর্মকর্তা তা করেছিলেন। তারা স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করেছিল। সেই ঘটনার কথা মনে হলে আজও শরীর শিউরে ওঠে। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহের শেষ নেই।
তারুণ্যের চোখে আবেগ, ভালোবাসা এবং আদর্শের নাম ‘মুজিব’। তারুণ্যের মেধা, যোগ্যতা, দুর্ভেদ্য শক্তিমত্তা ও অভিনবত্ব সর্বকালে প্রশংসিত। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নিতে পারে শুধু তারুণ্য। একটি সমাজ, সভ্যতা ও জাতিসত্তার বিকাশে তারুণ্যের ভূমিকা অপরিসীম প্রশংসিত ও তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শীতায় দীর্ঘ সময় ধরে চলা তরুণদের আদর্শ। তারুণ্যের কাছে মুজিব নামটি গৌরব এবং অহংকারের। বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর, কর্মজীবন ও আদর্শ তরুণদের আজও অনুপ্রাণিত করে। জাতির পিতার আদর্শ, দর্শন ও কর্মচিন্তা তরুণদের চলার পথের পাথেয়।
অত্যাচারী পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার জাঁতাকলে যখন বাঙালি জাতির জীবনীশক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল, তখন আলোর দিশারি হয়ে আগমন ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি পুরো জাতিকে শোনালেন স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। আঙুলের ইশারায় পুরো জাতিকে একীভূত করে বজ্রকণ্ঠের ঘোষণায় শোষক গোষ্ঠীর কবল থেকে ছিনিয়ে আনেন স্বাধীনতা। এরপর শুরু করেন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধু মানেই শক্তি, সাহস, উৎসাহ আর প্রেরণা। তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা, তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্নতা, মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতার গুণেই তিনি তরুণদের কাছে চির অমলিন।
আগস্ট এলেই বাঙালি হৃদয়ে নেমে আসে শোকের আঁধার। মনে পড়ে যায় সেই ভয়াল রাতের কথা। যে রাতে সপরিবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। তবে জেনেছে তাঁর অবদান ও নেতৃত্বের কথা।
এদেশের তারুণ্যের সবচেয়ে বড় গৌরবের বিষয় হচ্ছে যে তরুণরা দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে অসম সাহসিকতায় লড়াই করে তারা একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যে দেশের তরুণরা এই গৌরব করতে পারে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে দলটি পেরিয়ে এসেছে ৭৩টি বছর। এই দীর্ঘ সময়কালে পদ্মা-মেঘনা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের কালের সাক্ষী হয়ে, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ এখনও এদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক দল যেখানে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের এত বছর ধরে এ-রকম একটি অবস্থানে থাকা সোজা কথা নয়। দল হিসেবে এটিও আওয়ামী লীগের অনন্য একটি অর্জন।
আওয়ামী লীগের এই সাফল্যের রহস্যটা কী, যদি এক কথায় এর উত্তর বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে তারুণ্য। আওয়ামী লীগ হচ্ছে তারুণ্যনির্ভর একটি দল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে তরুণরাই হচ্ছে একটি জাতির প্রাণশক্তি। তরুণরাই একটি সমাজের গতিপ্রকৃতির নিয়ামক শক্তি। তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা। তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারা। তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রখে দাঁড়ানো। তাই সমাজকে বদলাতে হলে, সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই ভাবনা থেকে প্রথমে ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করা হয়। তার পরের বছর ১৯৪৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারুণ্যকে আওয়ামী লীগ কীভাবে ধারণ করেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় আওয়ামী লীগ তারুণ্যকে ধারণ করেছে তিনভাবে। প্রথমত; সাংগঠনিক কাঠামো ও দলীয় নেতৃত্বে তারুণ্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে। দ্বিতীয়ত; রাষ্ট্র ও সমাজ প্রশ্নে তারুণ্যের আশা-আকাক্ষা এবং স্পন্দনকে ধারণ করার মাধ্যমে। তৃতীয়ত; দলের ইশতেহার ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় তারুণ্যের ভাবনার প্রতিফলন ঘটানোর মাধ্যমে। উপরোক্ত এই ৩টি মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তারুণ্যকে ধারণ করেছে। যদিও পরিসর বিবেচনায় বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এখানে কম, তবুও চলুন সংক্ষেপে একটু বুঝে নিই কীভাবে সেটি সম্ভব হলো।
আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্ব কাঠামোতে সবসময় চমৎকারভাবে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আসছে। দলটির জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত নেতৃত্ব বিন্যাসেই এটি প্রতিফলিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় তখন সভাপতি হিসেবে অভিজ্ঞ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ৩১ বছর বয়সের শামসুল হক এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২৯ বছর বয়সের শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু ৩৩ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রসঙ্গক্রমে এখানে আরও উল্লেখ করতে হয় যে আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা যখন সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর।অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের সমন্বয়ে নেতৃত্ব বিন্যাসের এ-ধারাটি আওয়ামী লীগে সবসময় অব্যাহত ছিল এবং আছে। প্রতিটি জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য থাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পুরনো নেতৃত্বের সঙ্গে তরুণ ও নতুন নেতৃত্বকে তুলে আনা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার নির্দিষ্ট থাকায় অনেক সময় অনেক যোগ্য তরুণ নেতৃত্বকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া সম্ভব হয় না। এই ভাবনা থেকে নতুন ও তরুণ নেতৃত্বকে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি গঠন করা হয়। ফলে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে একটি বিশাল সংখ্যক তরুণ নেতৃত্বের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
পাশাপাশি, এই উপ-কমিটিগুলো সক্রিয় থাকার ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতাও তৈরি হয়। সাংগঠনিক কাঠামোতে তারুণ্যকে ধারণ করতে এটিও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।ময় সামনে থেকে লড়াই করেছে এদেশের তরুণরা। তারা মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছে।এদেশের তারুণ্যের সবচেয়ে বড় গৌরবের বিষয় হচ্ছে যে তরুণরা দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধে অসম সাহসিকতায় লড়াই করে তারা একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যে দেশের তরুণরা এই গৌরব করতে পারে।রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে তারা এই আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে তরুণদের সংগঠিত করেছে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৩-এর যুক্তফ্রন্ট, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৮২ থেকে ’৯০ পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ’৯২-এর গণ-আদালত, ’৯৫-তে বিএনপির ভোটচুরি প্রতিরোধের আন্দোলন, ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন- সর্বত্রই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণদের সংগঠিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তারুণ্যের বন্ধন অত্যন্ত সুদৃঢ়। এর প্রমাণ এদেশের তরুণরাই শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল।বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাও পিতার সেই পথ অনুসরণ করে চলেছেন। এদেশের তরুণদের একটি বড় দাবি ছিল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্বভার নিয়ে তরুণদের সেই দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যদিও এই বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে বিএনপি-জামাত বিভিন্ন ধরনের অশুভ তৎপরতা চালায়। নানাবিধ দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, হুমকি-ধমকি সত্ত্বেও দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই বিচারের ব্যাপারে অটল ছিলেন। আর তিনি অটল ছিলেন বলেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে এবং জাতি গ্লানিমুক্ত হয়েছে।আওয়ামী লীগ তারুণ্যের স্পন্দনকে কতটা ধারণ করে তার আরও একটি বড় উদাহরণ হচ্ছেÑ কোটা বাতিলের আন্দোলন। চাকরিক্ষেত্রে সুযোগের সমতা এবং ন্যায্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অনগ্রসর এবং পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ধরনের কোটা প্রথা চালু ছিল। কিন্তু কালপরিক্রমায় অনেক ক্ষেত্রে সেই কোটার উপযোগিতা ফুরিয়ে যায়। ফলে তরুণ শিক্ষার্থীরা এই কোটা বাতিলের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ কোটা প্রথা বাতিল করে দেয়। এই তারুণ্যের স্পন্দনকে বুকে ধারণ করতে পারার সক্ষমতা এটিই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সৌন্দর্য।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির আরেকটি বড় সৌন্দর্য হচ্ছে দলটির ইশতেহার এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় তরুণদের জন্য সবসময় কিছু করার তাগিদ থাকে এবং তাতে তারুণ্যের ভাবনার প্রতিফলন ঘটায়। সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই- সেই ভাবনা থেকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনায় বরাবরই একটি শিক্ষিত এবং দক্ষ তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার প্রতি জোর দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ তারুণ্যকে শক্তি ও সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে, যা রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তোলার বিষয়টির প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে- “রাষ্ট্র(ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য;(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য;(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিক সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য;কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।”
শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন ও উদ্যোগ গ্রহণ যথেষ্ট নয়। তরুণদেরও বিশাল একটা ভূমিকা রয়েছে। তাই ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তরুণ-যুবদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “বাবারা, একটু লেখাপড়া শিখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ করো, ঠিকমতো লেখাপড়া না শিখলে কোনো লাভ নাই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু পাবে বাপ-মাকে সাহায্য করো। প্যান্ট পরা শিখছ বলে বাবার সাথে হাল ধরতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখ। গ্রামে গ্রামে বাড়ির পাশে বেগুনগাছ লাগিও কয়টা মরিচ গাছ লাগিও কয়টা লাউগাছ ও কয়টা নারিকেলের চারা লাগিও। শুধু বিএ এমএ পাশ করে লাভ নাই।”বঙ্গবন্ধুর সেই দর্শন ও চিন্তাধারা এখনও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মধ্যে বহমান। একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে তিনি বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান করে শিক্ষার দুয়ারকে সবার জন্য অবারিত করা, জিরো ট্যাক্সের মাধ্যমে তরুণদের জন্য আইটিকে সহজলভ্য করা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা, ইন্টারনেট ও মোবাইলকে সহজলভ্য করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা, স্কুল-কলেজে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা, বৈশ্বিক পরিসরে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা, আউটসোর্সিংয়ের প্রসারে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবাকে নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন ধরনের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখানেই কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করা হয়েছে ‘তারুণ্যের শক্তি- বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। এই ঘোষণার আওতায় বলা হয়েছে- মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তরুণ ও যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে ইশতেহারে সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা, কর্মসূচি এবং অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে।আশা করি, উপরের কথাগুলো পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে আওয়ামী লীগ কেন এখনও তারুণ্যের দল। অতীতের পথপরিক্রমার আলোকে আগামীতেও আওয়ামী লীগ তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে তারুণ্যের শক্তিতে ভর করে তারুণ্যের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে তার রাজনৈতিক পথপরিক্রমার ছকটি এঁকে যাবে। আর এভাবেই আগামী দিনগুলোতেও আওয়ামী লীগ তারুণ্যের দল হিসেবেই টিকে থাকবে।
লেখক: প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।