জাতীয় নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে ১৪১ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার বিবৃতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর আখ্যায়িত করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন ৩৮৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তারা বলেন, বাংলাদেশকে সাংবিধানিক শূন্যতার দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে সাবেক মুখ্যসচিব, সচিব, আইজিপি, রাষ্ট্রদূত, উপাচার্য, গভর্নর, সেনা কর্মকর্তা, অধ্যাপক, চিকিৎসকসহ ৩৮৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। কমিশন এই তফসিল ঘোষণার পূর্বে কমিশনের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কমিশনের এই আহবানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও সমমনা দলগুলো কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এমনকি তাদেরকে কমিশন থেকে পৃথকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা সে আলোচনায় সাড়া দেয়নি, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।’

আরও বলা হয়, ‘সরকারের পদত্যাগের জন্য আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারকদের বাসভবনে হামলা, কর্তব্যরত পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হাসপাতালসহ অন্যান্য স্থাপনায় নাশকতা করা হয়। ২০১৪ সালেও একইভাবে তারা নাশকতা চালিয়েছিল। এখনও সেই মহল তফসিল ঘোষণার পর তাকে এক তরফা নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি করছে। ঘোষিত তফসিল কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের জন্য প্রযোজ্য এবং উম্মুক্ত। তাহলে কীভাবে এই তফসিল একতরফা হয় এবং কীভাবে অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তা কমিশনের সংবিধান সম্মত তফসিলকে এক তরফা তফসিল হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের জন্য সুপারিশ করেন তা সর্বসাধারণের কাছে বোধগম্য নয়। এই প্রয়াস বাংলাদেশকে একটি সাংবিধানিক শূন্যতার দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৪১ জনের বিবৃতিতে তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তনের বিষয়ে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোনও দলের একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দাবিকে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিট‘ বলে চালিয়ে দেওয়া ‘একতরফ‘ বিষয়। তাছাড়া বাংলাদেশে এমন কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি, যাতে এর প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র করে প্রাথমিকভাবে বিতর্কিত করেছে এবং ২০০৬ সালে বিবিধ পদক্ষেপের মাধ্যমে এক এগারোর সৃষ্টি করে তিন মাসের তত্বাবধায়ক সরকারকে দুই বছরের দীর্ঘ একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশের জনগণ এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নবম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের নিমিত্ত তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে।’

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের বিধিসম্মত তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে-যেখানে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণের উম্মুক্ত সুযোগ রয়েছে, তাকে ‘একতরফা তফসিল’ বলার কোনও অবকাশ নেই বলে মনে করেন ৩৮৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মুখ্য সচিব;  ড: ইকবাল মাহমুদ, সাবেক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি); কাজী রিয়াজুল হক, সভাপতি, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ও সাবেক    চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ; ড. আতিউর রহমান, সাবেক গর্ভনর, বাংলাদেশ ব্যাংক; কে. এইচ. মাসুদ সিদ্দিকী, সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি); উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি); মোঃ আবুল মনসুর, সাবেক সচিব; মোঃ নুর উর রহমান, সাবেক সচিব;  মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক সিনিয়র সচিব;  কামাল উদ্দিন তালুকদার, সাবেক সচিব; মোঃমামুনুর রসিদ, সাবেক সচিব;  মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সচিব; মোঃ রওনক জাহান, সাবেক সচিব; রেজাউল হাসান, সাবেক সচিব; জিষ্ণু রায় চৌধুরী, সাবেক সচিব (সাবেক রাষ্ট্রদূত); নূরজাহান বেগম, সাবেক সদস্য, সরকারি কর্ম কমিশন; শামসুল আরেফিন, সাবেক সিনিয়র সচিব; সুরাইয়া বেগম, সাবেক সিনিয়র সচিব ও সদস্য, তথ্য কমিশন;  ইব্রাহীম হোসেন খান, সাবেক সচিব;  মেজবাহ উল আলম, সাবেক সচিব; জ্যোতির্ময় দত্ত, সাবেক সচিব।; আফরোজা খানম, সাবেক সচিব; হুমায়ুন খালিদ, সাবেক সচিব; মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাবেক আইজিপি, সচিব ও কলামিস্ট; ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত; সাবেক রাষ্ট্রদূত মোঃ আব্দুল হান্নান; সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী, সাবেক সিনিয়র সচিব; মোহাম্মদ সিরাজুল হক খান, সাবেক সচিব; অপরূপ চৌধুরী, সাবেক সচিব; অশোক কুমার বিশ্বাস, সাবেক সচিব; ড. প্রশান্ত কুমার রায়, সাবেক সচিব; মোঃ নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব; সুবীর কিশোর চৌধুরী, সাবেক সচিব; মোঃ আব্দুস সামাদ, সাবেক সিনিয়র সচিব; সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন; মোল্লা ওয়াহদেুজ্জামান, সাবেক চেয়ারম্যান, বেসরকারিকরণ কমিশন;  ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব; অশোক মাধব রায়, সাবেক সচিব; সাবেক রাষ্ট্রদূত একেএম আতিকুর রহমান; সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ; মোহাম্মদ শহীদুল হক, সাবেক সিনিয়র সচিব; সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ সাবেক রাষ্ট্রদূত চৌধুরী ইখতিয়ার মমিন; সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান; সাবেক রাষ্ট্রদূত এটিএম নজরুল ইসলাম; মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ; এম এ কাদের সরকার, সাবেক সচিব; সুনীল কান্তি বোস, সাবেক সচিব; আমজাদ হোসনে, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ে; অশোক কুমার মন্ডল, সাবেক মহা ব্যাবস্থাপক, টেলিকম; কবির জামান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেলিফোন শিল্প সংস্থা; ড. জাফর আহমদ খান, সাবেক সিনিয়র সচিব; কাজী আখতার, সাবেক সচিব; মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, সাবেক সচিব। মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী, বীর প্রতীক, অবসরপ্রাপ্ত সচিব; লেঃ জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর, এনডিসি, পিএসসি (অবঃ); জেনারেল আব্দুল ওয়াদুদ, এনডিইউ, পিএসসি (অবঃ); জেনারেল সাব্বির আহমেদ, এসবিপি, ওএসপি, এসজিপি, এনডিসি, পিএসসি (অবঃ); এয়ার ভাইস মার্শাল সাদে উদ্দিন (অবঃ); মেজর জেনারেল আলাউদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, বিপি, এনডিসি, পিএসসি (অবঃ); মেজর জেনারেল শিকদার মোঃ সাহাবুদ্দিন (অবঃ); মেজর জেনারেল মোঃ আব্দুর রশিদ, পিএসসি, জি (অবঃ); মেজর জেনারেল নাসির উদ্দিন (অবঃ), এমপি; মেজর জেনারেল মোঃ সালাহউদ্দিন মিয়াজী, পিএসসি (অবঃ); মেজর জেনারেল মোহাম্মদ তৌহিদ-উল-ইসলাম, বিএসপি, এনডিইউ, পিএসসি (অবঃ); রিয়ার এডমিরাল এ কে এম আজাদ (অবঃ); মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ; মোঃ আবুল কাশেম হাওলাদার, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ; এম সানাউল হক, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ;  মোঃ আলী ইমাম চৌধুরী, বিপিএম, অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ; বীর মুক্তিযোদ্ধা এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী পিপিএম, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি ও সাবেক চেয়ারম্যান, পিএসসি; বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুস সাত্তার, পিপিএম, অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ; বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নাজমুল হক, পিপিএম, অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ, প্রমুখ।