নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নেই দীর্ঘদিন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত, পলাতক জীবন কাটাচ্ছে লন্ডনে। তাদের ঘনিষ্ঠ নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দল পরিচালনার চেষ্টা করলেও ক্রমেই বাড়ছে অন্তর্কোন্দল। শুধু নেতৃত্বহীনতার কারণে ২০১৪ সালে ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে নির্বাচনে এসেছিল বিএনপি। এমনকি আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনও তারা গ্রহণযোগ্য কোনো নেতৃত্ব উপস্থাপন করতে পারেনি। ফলে দেশবাসীও আস্থাহীনতায় ভুগছে বিএনপির গতিবিধি নিয়ে।

মূলত কমিটি বাণিজ্য ও নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল, নেতাদের সন্ত্রাসবাদী বক্তব্য এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের গণহারে পদায়নের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব, শঙ্কা, ভয় ও অনিশ্চয়তা গ্রাস করে ফেলেছে বিএনপিকে। নেতৃত্বহীনতার কারণে গত দেড় দশকে ইস্যুভিত্তিক কোনো আন্দোলনও গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি, ফলে নিজেদের ক্ষতির পাশাপাশি তারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে দেশের গণতন্ত্রকেও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বিএনপির কন্ট্রোল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে। টেলিফোনে কথা বলে অতীতেও কোনো আন্দোলন বা নির্বাচন হয়নি। ভবিষ্যতেও সম্ভাবনা নেই। মানুষ একটি দলের নেতাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখতে চায়। কোনো সঠিক দিক নির্দেশনা না থাকায়- ঈদের পরে আন্দোলন, ১০ তারিখের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়- এসব ফাঁকা বুলি এখন বিএনপিকে জনগণের কাছে হাস্যরসের বিষয়ে পরিণত করেছে।

নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ না থাকায় এমনিতেই দেশজুড়ে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। তারমধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে সিনিয়র নেতাদের দলত্যাগ। তারেক রহমানের দুর্ব্যবহার ও দলের সামনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো লক্ষ্য না থাকায় ইতোমধ্যেই দল ত্যাগ করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক নেতা। বাকি যারা আছেন, তারা বহু গ্রুপে বিভক্ত। অনেকেই আবার তলে তলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছেন নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে বিএনপি পরিণত হয়েছে একটা লিমিটিড কোম্পানিতে।

সিনিয়র নেতারা বলছেন, রাজনীতির ছদ্মবেশে সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের বিরোধিতা করায় তারেক রহমানের অসভ্য ব্যবহারের শিকার হয়েছেন তারা। ভবিষ্যতে আর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই তাদের। এমনকি জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাও কমিটি বাণিজ্যের বলী হয়ে এখন পুরোপুরি নিস্ক্রিয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভীর দুই গ্রুপে বিভক্ত বিএনপির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে মির্জা আব্বাস, আমানুল্লাহ আমান, হাবীবুন নবী খান সোহেল, গয়েশ্বর চন্দ্র, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিদের আরো অনেকগুলো পকেট গ্রুপ। ফলে একক দল হিসেবে বিলীন হয়ে গেছে দলটির অস্তিত্ব। এটি এখন ব্যক্তি সর্বস্ব টুকরো টুকরো গ্রুপে বিভক্ত। সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য কোনো একক নেতৃত্বের অধীনে একতাবদ্ধ হতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।