নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের পর আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে এ টানেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘টানেল উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দুটি টিউবই প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের পরদিনই যান চলাচলের জন্য তা খুলে দেয়া হবে।’

টানেল উদ্বোধনের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘‌২৮ অক্টোবর দেশ ও জাতির গর্ব করার মতো একটি দিন আজ। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বৃহৎ টানেল উদ্বোধন করবেন। বাঙালির এই স্বর্ণালি স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রাপ্তিযোগ বিএনপি-জামায়াত এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা ওই দিন ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে নাশকতা-অরাজকতার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মহাসমাবেশ ডেকেছে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। টানেলের পুরো রুটের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার (৫.৮৩ মাইল)। সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল) ও ব্যাস ১০.৮০ মিটার (৩৫.৪ ফুট)। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নেটওয়ার্ক উন্নততর হবে।

২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ঘোষণা ছিল। চট্টগ্রামের একাধিক জনসভাতেও বিষয়টি উল্লেখ করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বিষয়টিকে হেসে উড়িয়ে দেয় বিএনপি। বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নদীর নিচ দিয়ে টানেল করা স্বপ্নে ঘি খাওয়ার মতো। কিন্তু তাদের এসব অবহেলা উপেক্ষা করে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প হাতে নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।

দায়িত্বগ্রহণের সাথে সাথে শুরু হয় কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়নের কাজ। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে (বিবিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯ এপ্রিল ২০১১ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দেওয়া হয় হংকংয়ের আরুপ এন্ড পার্টনার্স এবং চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে। ১৭ এপ্রিল ২০১৩ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। ২০১৪ সালের ৯ জুন বেইজিংয়ে চীনের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন নির্মাতা চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসির সঙ্গে চুক্তি সই হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।