একটু একটু করে নিজেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছেন মডেল, অভিনেতা, নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালক মীর সাব্বির। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা ১৯৯৯ সালে ‘পুত্র’ নামে একটি নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশন অভিনয়ের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মীর সাব্বির। এরপর তার ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন নাটক, ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপনচিত্র, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজ, উপস্থাপনার মতো নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি করেছেন পরিচালনাও। তার পরিচালনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায় ধারাবাহিক নাটক ‘নোয়াশাল’।
এরপর আসেন বড়পর্দার জন্য চলচ্চিত্র পরিচালনায়। সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমাটির কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, গীত রচনা এবং নির্মাণ করেছেন মীর সাব্বির। ‘রাতজাগা ফুল’ নামের এই প্রথম সিনেমাতেই চমকে দেন তিনি সবাইকে। একযোগে ৩০টিরও বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। নতুন চিত্রপরিচালক হিসেবে অন্যদের যেখানে ৪/৫টি প্রেক্ষাগৃহ পাওয়াও কঠিন হয়ে যায় সেখানে মীর সাব্বিরের এটা কম কৃতিত্বের বিষয় নয়। প্রেক্ষাগৃহের মালিকরাই তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিলেন এটা দর্শক খাবে।
সরকারি অনুদানের সিনেমাগুলো নিয়ে এমনিতেই প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের আগ্রহ থাকে না। দর্শকদেরও আগ্রহ থাকে না। তবে নাটকে মীর সাব্বিরের জনপ্রিয়তার কাছে এর সবই হার মানে। মুক্তির প্রথম দিনেই প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ছিল দর্শকের আশানুরূপ উপস্থিতি।
ছবিটিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সিয়াম আহমেদের সঙ্গে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন সাব্বির। ইতিপূর্বে অন্যের পরিচালনায় বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। অন্য পরিচালক যা করতে পারেননি সেটা তিনি নিজের পরিচালনার মাধ্যমে করিয়ে তাদের দেখালেন যে, ‘দেখ, কীভাবে একজন অভিনেতা থেকে তার অভিনয়ের সেরাটা বের করে আনতে হয়। তোমরা আমার ভেতর থেকে যা বের করে আনতে পারনি আমি নিজেই নিজের ভেতর থেকে তা বের করে আনলাম!’ অর্থাৎ অন্য পরিচালক তার মধ্য থেকে যা এনে দিতে পারেননি সেটা তিনি নিজের পরিচালিত সিনেমাতে করে দেখালেন।
এরপর আর কোনো সিনেমা নির্মাণে হাত না দিলেও যথারীতি তার নাটক নির্মাণ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম নিজের রচনা ও আমিরুল ইসলাম অরুণের সঙ্গে যৌথ পরিচালনায় ‘আলাদিন’ নামে নতুন নাটক বানিয়েছেন। নাটকটিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন। এ ছাড়া অন্যদের পরিচালনায় তিনটি ৭ পর্বের নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন আরও দুটি এক ঘণ্টার নাটকে। একটি নাটকের নাম ‘তোতলা জামাই’, আরেকটি নাটকের নাম ‘বয়রা দুলাভাই’। অভিনয় করেছেন হানিফ সংকেতের পরিচালনায় একটি নাটকে। এ ভাবে একের পর এক নতুন নতুন নাটকে অভিনয় করে আসছেন মীর সাব্বির।
সম্প্রতি ছোটপর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা আব্দুন নূর সজল ও নবাগত অভিনেত্রী রোদেলা মির্জাকে জুটি করে ‘বিটার সুইট’ নামের নতুন একটি নাটক পরিচালনা করলেন এই তারকা। আবীর ফেরদৌস রচিত এই নাটকটির শুটিং সম্পন্ন হয় রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন লোকেশনে। মীর সাব্বির জানান, নাটকটি শিগগিরই একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হবে। এর আগে মীর সাব্বিরের সঙ্গে বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করলেও এবারই প্রথম সজল মীর সাব্বিরের পরিচালনায় কোনো নাটকে অভিনয় করলেন। অন্যদিকে, রোদেলার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। মীর সাব্বিরকে সহশিল্পী হিসেবে কয়েকটি নাটকে পাওয়ার পর মূলত মীর সাব্বিরের আগ্রহেই রোদেলাকে এই খণ্ড নাটকে নেওয়া।
‘বিটার সুইট’ নাটকটি প্রসঙ্গে মীর সাব্বির বলেন, ‘আমি তো মূলত অভিনেতা। তবে পরিচালনাও আমি দারুণ উপভোগ করি। সজল ও রোদেলাকে নিয়ে ঠিক তেমনি একটি উপভোগ্য কাজ করলাম। সজল নিঃসন্দেহে খুব ভালো একজন অভিনেতা। গল্পের প্রয়োজনেই তাকে নেওয়া। আর রোদেলা নতুন হিসেবে অভিনয়ে বেশ ভালো করছে। নতুনদের তো আমাদেরই সুযোগ দিতে হবে। রোদেলার আগামীটা আমার কাছে মনে হচ্ছে বেশ উজ্জ্বল। সজল বলেন, অভিনেতা হিসেবে সাব্বির ভাই অনবদ্য। তবে আমার কাছে মনে হয় পরিচালনার জায়গায় তিনি আরও অনেক বেশি স্ট্রং। তিনি এমনই একজন পরিচালক যিনি খুঁটিনাটি সব বিষয়েই গাইড করতে পারেন। যা একজন শিল্পীর অভিনয় অনেক সহজ করে দেয়। রোদেলা নতুন হিসেবে ভালো করেছে।’
তাহলে নতুন কোনো সিনেমায় আপাতত হাত দেবেন নাÑ এমন কথায় মীর সাব্বির বলেন, ‘এ বছরের শেষেই নতুন সিনেমার নাম ঘোষণা দেবেন তিনি। তবে ছবিটির নাম, গল্পের বিষয় এ সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে চাননি তিনি। যেসব নাটকে অভিনয় করছেন এগুলোর মধ্যে কোন ধরনের নাটক তার কাছে ভালো লাগে এমন কথায় তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বিরতিহীন নাটক, এক ঘণ্টার নাটক এবং টেলিফিল্মই ভালো লাগে বেশি। আমার ধারণা দর্শকরাও এরকম নাটকই বেশি পছন্দ করেন। তবে কয়েকদিন ধরে খণ্ড নাটক দেখার ধৈর্য দর্শকের আছে বলে আমার মনে হয় না। এত ধৈর্য দর্শকদের কমই আছে। আমার কাছে সব সময় ভালো লাগে এক ঘণ্টার নাটক, বিরতিহীন নাটক ও টেলিফিল্ম।’
ঢাকাই শোবিজে আগে থেকেই একজন দর্শকপ্রিয় অভিনেতা, নির্মাতা ও নাট্যকার হিসেবে পরিচিত মীর সাব্বির। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন, পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষাকে তার অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পেয়েছেন অন্যরকম সাফল্য। নিজের গ্রামের বাড়ি ওই অঞ্চলে হওয়াতেও পেয়েছেন দারুণ সুবিধা নিজের আঞ্চলিক ভাষাকে গোটা বাংলাদেশেই আলোচিত করে তুলতে। মীর সাব্বিরের দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে আগে তার ওই তিন পরিচয় ছিল শুধু নাটকের জন্য। এরপর নাটকের সীমানা পেরিয়ে সিনেমার আঙিনায় শুরু হয় তার নতুন পথচলা। দীর্ঘ ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে কোনো অপ্রাপ্তি আছে কিনা, এমন কথায় মীর সাব্বির বলেন, ‘কোনো শিল্পীই চাওয়া-পাওয়ার কথা ভেবে কাজ করেন না।
শিল্পীরা কাজ করেন মানুষের জন্য। আমিও অভিনয় করেছি, পরিচালনা করেছি শিল্প সাধনার জায়গা থেকে। সেই কাজের স্বীকৃতি পেলে তো একটা বাড়তি ভালোলাগা কাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমি আমার কাজটি করার সময় শতভাগ সততা, আন্তরিকতা ও প্রেম দিয়ে করে থাকি। সত্যি কথা বলতে কি, আমি আমার ক্যারিয়ারের প্রথম থেকেই নিজের দায়বদ্ধতার ব্যাপারে যত্নশীল। কাজের প্রতি শতভাগ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করি। শিল্পের প্রতি আমার কমিটমেন্ট সব সময়ই ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’