বিশেষ প্রতিনিধি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম বৈঠকে অংশ নিতে বেলজিয়াম রওনা হয়েছেন। এরইমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) একটি কৌশলগত ও রাজনৈতিক অংশীদারিত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান সেই লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ। এবারই এই ফোরাম প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করতে বসছে। ফোরামের প্রথম বৈঠকের প্রতিপাদ্য উল্লেখ করা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে একসঙ্গে শক্তিশালী হওয়া’।

উল্লেখ্য, চীনের ‘রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ’ এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২০২১ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গ্লোবাল গেটওয়ে চালু করে। এর লক্ষ্য ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।

দুইদিনের এই অনুষ্ঠানে সেনেগাল, নামিবিয়া ও মলদোভাসহ মোট বিশটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানগণ আমন্ত্রিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা তাঁদের মধ্যে একজন। বৈঠকে ইইউ এবং জোটের অংশীদার আমন্ত্রিত কয়েকটি দেশের সরকার প্রতিনিধিদের সাথে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), সংস্কার এবং উন্নয়নবিষয়ক ইউরোপীয় ব্যাংক (ইবিআরডি), বেসরকারি খাত, নাগরিক সমাজ, নেতৃস্থানীয় চিন্তাবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদেরকে একত্রিত করবে।

গ্লোবাল গেটওয়ের অধীনে অবকাঠামো এবং সংযোগ, অভিবাসন, সবুজ জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সুনীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি), সমুদ্র সম্পর্কিত সহযোগিতা, নিরাপত্তা, পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কৌশলগত বিষয় নিয়ে অংশীদারেরা কাজ করবে। ইতিপূর্বে বড় বড় বৈশ্বিক দাতা সংস্থা বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে অর্থ দিয়েছে, কিন্তু সেগুলো সবসময় টেকসই বা ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে পারেনি।  

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনদিকগুলো বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনে সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে ইইউ। এরই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক থেকে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুতে বাংলাদেশকে ৩৫ কোটি ইউরো ঋণ এবং সাড়ে ৪ কোটি ইউরো মঞ্জুরি হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে এ বিষয়ে চুক্তি সই হবে। ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশকে দেয়া ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের এটিই প্রথম ঋণ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এখন বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী, একইভাবে আমরাও আগ্রহী। ভালো প্রকল্পের নকশা করতে পারলে আমরা অনেক তহবিল পাবো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশন বক্তৃতা করতে পারেন। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের এ আলোচনায় গ্লোবাল গেটওয়ের আওতায় ৮৯ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। এই সফরকালে ৩ বিষয়ের উপর অগ্রাধিকার দিবে বাংলাদেশ- ৩৫ কোটি ইউরো ঋণ ও সাড়ে ৪ কোটি মঞ্জুরি পাওয়ার চুক্তি সই; ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে আলোচনা। সম্পর্কের পরের ধাপে পারস্পরিক অংশীদারত্বকে উন্নয়ন সহযোগিতা থেকে কৌশলগত সহযোগিতায় উত্তরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেদের মতে, গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের ফাঁকে বাংলাদেশের নির্বাচনসহ সুশাসন ও মানবাধিকারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান ইউরোপীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফর তাৎপর্যপূর্ণ। এ ছাড়া ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকার বাজারসুবিধা (জিএসপি) ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাবে বাংলাদেশের পণ্য।