বিশেষ প্রতিনিধি

চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ আগামী ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত হলেও শেষ হতে যাচ্ছে এর অধিবেশন পর্ব। চলতি সংসদের শেষ অধিবেশন বসছে আজ রবিবার (২২ অক্টোবর)। ৫ কার্যদিবস চলে আগামী ২৯ অক্টোবর এ অধিবেশনটি শেষ হওয়ার কথা। পুরো দুই বছরের মতো কোভিড মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে চলার মধ্য দিয়ে এবারের সংসদ শেষ হচ্ছে।

করোনা ছিলো পুরো বিশ্বের জন্যই এক নতুন অভিজ্ঞতা। সেসময় মাত্র দেড় ঘণ্টায় একটি অধিবেশন শেষ করা হয়েছে, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম সংসদ অধিবেশন। সংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নিয়মিত বিরতিতেই সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অনেকরকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব করতে হয়েছে। এবারের সংসদে অতীতের মতো ওয়াকআউট ও বিরোধী দলের সংসদ বর্জনও হয়নি। নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োজনীয় বেশকিছু আইন পাস হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে এই জাতীয় সংসদ। করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর এই সংসদের কার্যক্রম ছিল অনেকটাই সীমিত। নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম ছিলো অধিবেশনের শুরুতেই কোভিড টেস্টের বাধ্যবাধকতা। সর্বশেষ দুটি অধিবেশন ছাড়া করোনা পরবর্তী সবগুলো অধিবেশনেই সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়মিত কোভিড টেস্ট করেই সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করতে হয়েছে।

এবারের সংসদে দুটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বসে বিশেষ অধিবেশন। এই অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক নিয়ে ভাষণ দেন তৎকালিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সংসদ সদস্যরাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানাতে অধিবেশনে একটি সাধারণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

সংসদের খরচের বিলের পরিমান নিয়ে প্রতিবেদন হয় প্রতিবছরই। এবার বিলের পরিমাণ ছিলো অনেক কম। করোনাকাল এবং পরবর্তী সময়গুলোকে সংসদ অধিবেশনের কার্যদিবস তুলনামূলক হওয়ার হওয়ার কারণে একাদশ সংসদ আগের দুটি সংসদের তুলনায় কম দিন চলছে। সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া সংসদের ২৪তম অধিবেশনের হিসাব অনুযায়ী সংসদের মোট কার্যদিবস হয়েছে ২৬২দিন। শেষ অধিবেশনে ৫ কার্যদিবস হলে সেটা দাঁড়াবে ২৬৭ দিনে।

এবার সর্বশেষ অধিবেশন পর্যন্ত ১৪০টি বিল পাস হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ে আরো ২২টি বিল পেন্ডিং আছে। এর মধ্যে আর কোন বিল পাস হবে না বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। সব মিলিয়ে একাদশ সংসদে পাস হওয়া বিলের সংখ্যা প্রায় দেড়শ। এর আগে নবম সংসদে বিল পাস হয় ২৭১টি। আর দশম সংসদে বিল পাস হয়েছিল ১৯৩টি।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, চলতি সংসদে এখন পর্যন্ত ১৪০টি বিল পাস হয়েছে। কিন্তু এসব বিল পাসে বেশির ভাগ সংসদ সদস্যের ভূমিকা ছিল ‘হ্যাঁ’- ‘না’ ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিএনপি সংসদে থাকাকালে দলটির ২/৩ জনসহ ১২-১৩ জন সংসদ সদস্য বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব আনতেন। বিএনপি পদত্যাগ করার পর এখন জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৮-১০ জন সংসদ সদস্য বিভিন্ন বিলের ওপর সংশোধনী এনে থাকেন। তবে এতে বিলের মৌলিক কোনও পরিবর্তন হয় না।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন, ‘অক্টোবরে চলতি সংসদের আরেকটি অধিবেশন বসবে, সেটাই হবে শেষ অধিবেশন। এরপরই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।’সংবিধান মোতাবেক সংসদের একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা আছে। সংসদের ২৪তম অধিবেশন গত ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল কিংবা সাংবিধানিক সময়সীমার আগে ৬০ দিন সময় না থাকায় মাত্র ৩৭ দিনের মাথায় পরবর্তী (২৫তম) অধিবেশন ডাকেন রাষ্ট্রপতি।

প্রসঙ্গত, বিগত দশম সংসদের শেষ বৈঠক বসেছিল ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর। ঐ বছরের ৮ নভেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন এবং ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হয়।