বিশেষ প্রতিনিধি
১৯৭৫ সালের সালের মত আরেকটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিতে চায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ জন্য দলটি তাদের নেতাকর্মীদের সহিংস হতে আহবান জানানোর পাশাপাশি দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে। যার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়।
এমন ইঙ্গিত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনভেস্টিং ডটকম নামে একটি সংবাদমাধ্যম। তাতে তারা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনটিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তির কথা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে বলে আসছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন। এতে আরো বলা হয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা প্রায়ই দলীয় কর্মীদের রাজপথে নেমে জোর করে ক্ষমতা দখলের আহ্বান জানাচ্ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আক্রমণ বা শপিং মলে গ্রেনেড হামলা চালানো বা পূজা প্যান্ডেলগুলো বিএনপি ক্যাডারদের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
এর আগে একইভাবে হামলা চালানো হয়েছিলো ২০০১ সালের জাতীয সংসদ নির্বাচনের পর। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অমানবিক হামলার সাক্ষী হয়েছিল বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূতের কথা উল্লখ করে বলা হয়, ওই রাষ্ট্রদূত “সহিংস রাজনীতির প্রতীক”। বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও জঙ্গিদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার সুনাম রয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল, মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিং বলেন, ২০০৪ সালে এপ্রিলে যে ১০ ট্রাক অস্ত্রের একটি বিশাল চালান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ করা হয়েছিল, সেগুলো ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম এবং ভারতের উত্তর-পূর্বে আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হচ্ছিল। মূলত ভারত ও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করাই ছিল উদ্দেশ্য। গগনজিৎ সিং আরও বলেন, তৎকালীন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকারের মাধ্যমে এই অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিলো।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তারেকের আরেক অনুগত লুৎফুজ্জামান বাবর, যিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং তিনি এখন দণ্ডপ্রাপ্ত।
ইনভেস্টিং ডটকম তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০০৭ সালের জুন মাসে পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্ক(আইজিপি) নুর মোহাম্মদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তারেক রহমান ভয়ঙ্কর জঙ্গি বাংলা ভাইয়ের প্রতি তার সমর্থনও প্রকাশ করেছিলেন। “লুৎফুজ্জামান বাবর কখনই জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেননি। প্রকৃতপক্ষে, তিনি উত্তরের জেলাগুলিতে চরমপন্থী বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবি নামে একটি সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠীকে সংগঠিত করার জন্য সমস্ত পুলিশ এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করেছিলেন।’’
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২৮ অক্টোবর দেশের রাস্তায় অগ্নিসংযোগের মত সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করার আরেকটি সম্ভাব্য পরিকল্পনা করছে বিএনপি ও তার সহযোগি সংগঠনগুলো। ঠিক ২০০৬ সালে যেভাবে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে, রাজধানীর রাস্তায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর হামলা চালায় সেরকম কিছু শঙ্কার কথা উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে। ওই হামলায় বেশ কয়েকজন প্রাণ হারায়।
সম্প্রতি আ.লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপিতে অনেক নেতাই এখন দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করছেন। এর অন্যতম কারণ ” বিএনপিতে তারেকের অনুগতরা রাজপথে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার দিকে মনোনিবেশ করেছে।” ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র (ডিসি মিডিয়া) ফারুক হুসেন আইএএনএসকে বলেন, “শহরের মানুষকে নিরাপদে রাখা আমাদের কাজ। আমরা জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার কোন প্রচেষ্টা সফল হতে দিব না। “
আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের এক বছরব্যাপী বিএনপির প্রচারণা জনসমর্থন অর্জনে স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।