নীরলফামারীতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন বাজারে জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা। প্রতি বছরই দুর্গাপূজাকে ঘিরে শপিংমল গুলোতে থাকে বেচাকেনার বাড়তি চাপ। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। দোকান গুলো সাজানো হয়েছে ঝাঁরবাতি দিয়ে।
অনেকেই এরই মধ্যে কেনাকাটা সেরেছেন পরিবারের জন্য। আবার অনেকেই আসছেন নতুন করে কিনতে। কেউবা আসছেন টুকিটাকি বাজার করার জন্য। তবে গতকাল মহাষষ্ঠীর দিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে শাড়ী, থ্রি-পিচ, জুতো, সেন্ডেল ও কসমেটিকস্।
জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ার সুধির চন্দ্র রায় জানান, ‘জিনিশপত্রের যা দাম তা আমাদের মতো গরীব মানুষের পুজায় কাপড় চোপড় করা খুবই কঠিন। পাঁচ সদস্যের পরিবারে আমি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সামান্য আয়ে আমার সংসার চলে। এরপরেও যা না কিনলেই নয়, নাতনির জন্য থ্রি-পিচ, নাতির জন্য রেডিমেট সার্ট প্যান্ট ও স্ত্রীর জন্য সাড়ে ৫০০ টাকা দামে একটি শাড়ী কিনেছি, আর আমার জন্য শুধু একটি ফতুয়া নিয়েছি।’
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকালে জেলা শহরের মকবুল হোসেন সুপার মার্কেট, পৌর সুপার মার্কেট, মুরাদ আলী প্লজা, হাজি মহসিন সড়কের এবাদত প্লাজা, রকস্ িক্লোথ স্টোর, চন্দন ক্লোথ ষ্টোর ও বড় বাজারসহ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব মার্কেটে রয়েছে স্পেশাল ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, জামদানি শাড়ি, সিল্ক শাড়ি, সুতি শাড়িসহ কসমেটিকস এবং জুতো সেন্ডেল। এগুলো ১৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে।
বড় বাজারের কাপড় দোকানদার ও স্বৃতি গার্মেন্টস্ এর মালিক মকবুল হোসেন জানান, ‘আমরা কিছু চমৎকার ডিজাইনের পাঞ্জাবী রেখেছি। এসব পাঞ্জাবী ১৭০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ছেলে ও বাবার একই রঙের পাঞ্জাবি রয়েছে। তিনি বলেন, বিক্রিও ভাল হচ্ছে। আশা করি, এবার পুজায় বেচাকেনা করে কিছু লাভ করা যাবে। আবার নরমাল এসব পণ্য ১ হাজার টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।’
একই বাজারের কাটা কাপড়ের দোকানদার মনোয়ার হোসেন জানান, ‘বিভিন্ন দামের কাটা কাপড়সহ শাড়ী, থ্রি-পিচ, স্যালোয়ার, কামিজ ও ওড়না সাধ্যের মধ্যে ক্রেতারা কিনতে পেড়ে বেজায় খুশি। গত বছরের চেয়ে এবার পূজায় বেচাকেনা ভাল হচ্ছে এবং ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে এসব পণ্য রেখেছি। নতুন নতুন কিছু শাড়ি, ব্লাউজ পিচ ও কাটা কাপড় এনেছি।’
চন্দন বস্ত্রলায়ের মালিক তুলশী কুমার কুন্ডু জানান, ‘মহাষষ্ঠীতে মায়ের পূজা উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ে কটন, মস্লিন শাড়ি, হাফ সিল্ক ফতুয়া, বাচ্চাদের মেচিং সেট ও বড় বাচ্চাদের বিভিন্ন রং এর পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ৩০০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, পূজা উপলক্ষে মকবুল হোসেন সুপার মার্কেটে শাড়ি কিনতে আসা এক নারী ক্রেতা বলেন, ‘অনেক কিছুই কেনাকাটা করেছি পরিবারের জন্য। আমারটা বাকি ছিল সেটা আজ কিনতে এসেছি। দরদামের বিষয়ে তিনি বলেন, দাম একটু বেশি তারপরেও চেষ্টা করছি সাধ্যের মধ্যে কিনতে।’
একই মার্কেটে কথা হয় নিউ বাবুপাড়ার নারী ক্রেতা কৃষ্ণা রায় জানান, ‘বর্তমানে চাল, ডাল,চিনি, সোয়াবিন,আটা ময়দা ও সবজিসহ কাপড়ের বাজার আকাশচুম্বি। তারপরেও দুর্গা উৎসবে ছেলে, মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের কেনা কাটা সেরে নিচ্ছি।’
ওই বাজারের জুতার দোকান লেবু মিয়া জানায়, ‘এবার পুজোয় গত বছরের তুলনায় ক্রেতা একটু কম। পুজোর কথা চিন্তা করে মোকাম থেকে লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন কোয়ালিটির জুতা, সেন্ডেল ও মেয়েদের পাম্পসু আমদানি করেছি। কিন্তু সেই অনুযায়ী তেমন বিক্রি হচ্ছে না। জুতার দাম খুব একটা বাড়েনি তবে বিভিন্ন ধরনের জুতা সেন্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা দামের মধ্যে। কারুকাজা করা মেয়েদের পাম্পসু পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকায়।’