ভারতের মাটিতে আজ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান। আগের দুই ম্যাচই জিতে নিয়ে এবারের আসরে এখনো অপরাজিত দুদলই। বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে সাতবারের লড়াইয়ে পাকিস্তানের প্রাপ্তি শূন্য। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দুদলের লড়াইটি শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়।
গতকাল অনুশীলনে ফিরলেও আজ ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে থাকা শুভমান গিলের খেলা নিশ্চিত নয়। ইশান কিশানকে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠিয়ে আনা হতে পারে। আগের মাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বেশ কয়েকটি রেকর্ড করেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭ সেঞ্চুরির মালিক এখন রোহিত। এছাড়া বিশ্বকাপে ভারতের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির নজিরও গড়েন গত ম্যাচে।
১৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৮৪ বলে ১৩১ রান করা এই ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ৪৫৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৫৫৬টি ছয় মেরেছেন তিনি। রোহিত ছাড়াও সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলিও রয়েছেন দারুণ ফর্মে। দুই ম্যাচেই রানের দেখা পেয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে আছেন লোকেশ রাহুল। সবশেষ নয় ম্যাচে ১০০ গড়ে ৪০২ রান করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
এছাড়া দলে রয়েছেন এশিয়া কাপের টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় কুলদীপ যাদব। সবশেষ ৭ সাত ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া রয়েছেন দুই অভিজ্ঞ স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দন অশ্বিন। ভারতের পেস অ্যাটাকের রয়েছেন বুমরাহ, শামি ও সিরাজের মতো বিশ্বমানের বোলার। আজকের ম্যাচের আগে ভারতীয় বোলারদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে আফগানদের বিপক্ষে পেসার জসপ্রিত বুমরাহর ৩৯ রানে ৪ উইকেট।
অন্যদিকে পাক অধিনায়ক বাবর আজম ওয়ানডে ব্যাটার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন। যদিও বাবরদের সাম্প্রতিক ফর্ম তেমন ভালো যাচ্ছে না। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৫ এবং ১০ রান করেন তিনি। তবে গত ম্যাচে পাকিস্তানকে জেতানো রিজওয়ান সবশেষ ১০ ম্যাচে রিজওয়ান ৮০ গড়ে করেছেন ৪৮৪ রান। সঙ্গে সালমান আগা, সৌদ শাকিল, আবদুল্লাহ শফিকের মতো তরুণরাও আলো ছড়াচ্ছেন। যা ভারতের মাটিতে পাকিস্তানকে বাড়তি উদ্দীপনা জোগাচ্ছে।
ভারতের ধীরগতির উইকেটে পাকিস্তান তাদের স্পিন ট্রায়ো শাদাব খান, উসমান মির ও মোহাম্মদ নাওয়াজের সঙ্গে দুই পার্ট-টাইমার ইফতিখার আহমেদ ও আগা সালমানকে কাজে লাগাতে চায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে রয়েছেন শাহীন শাহ, হাসান আলী কিংবা হারিস রউফের মতো পেসার।
শাহিন আফ্রিদি বিশ্বকাপে এখনো জ্বলে উঠতে না পারলেও দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৬টি ও ৫টি করে উইকেট নিয়ে এবারের আসরের সর্বোচ্চ উইকেট তালিকার সেরা পাঁচে অবস্থান করছেন হাসান আলী ও হারিস রউফ। বিশ্বকাপের দুই ম্যাচ বাদ দিলে সবশেষ ১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট রয়েছে আফ্রিদিরও।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপে রেকর্ড ৩৪৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে পাকিস্তান। উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান অপরাজিত ১৩১ এবং আব্দুল্লাহ শফিক ১১৩ রান করেন।
অন্যদিকে প্রথম ম্যাচেই পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটের দারুণ জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষেও ৮ উইকেটের সহজ জয় পায় তারা।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে শুধু আইসিসি ইভেন্টেই মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। এই দুদলের ম্যাচ নিয়ে সব সময়ই সারা বিশ্বের লাখ লাখ ভক্তদের মধ্যে বিরাজ করে উত্তেজনা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ দেখতে মরিয়া সমর্থকদের চাপে ইতোমধ্যেই আহমেদাবাদে সব হোটেলের রুম শেষ হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী আটগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ম্যাচ টিকেট। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে দুই দলই মাঠে নামছে টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে।
হায়দারাবাদে ম্যাচসেরা হওয়া রিজওয়ান বলেন, ‘আমরা এখন জয়ের ধারায় আছি। তারাও একটা পরিকল্পনা নিয়েই খেলতে নামবে, আমরাও পরিকল্পনা নিয়ে খেলব।’ কিন্তু টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ নিয়ে ঠাণ্ডা মেজাজে আছেন রোহিত।
দিল্লিতে রিজওয়ানের সমান ১৩১ রানের ইনিংস খেলার পর রোহিত বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না এবং আমরা যেসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেগুলোতে মনোযোগ দিয়ে থাকি।’
১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বকাপে সাত দেখায় ভারতের বিপক্ষে কখনই জয় পায়নি পাকিস্তান। সবশেষ আসরেও ম্যানচেস্টারে ৮৯ রানে হেরেছিল পাকিস্তান। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ১৩৪ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৭৩টিতে, ভারতের জয় ৫৬টিতে। কিন্তু এশিয়া কাপে সুপার ফোরে পাকিস্তানকে ২২৮ রানের ব্যবধানে হারায় ভারত।
শেষ পর্যন্ত আসরের শিরোপাও জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। ভিসা পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে পাকিস্তানে প্রথম দুই ম্যাচ মিস করেন পাকিস্তানের সাংবাদিকরা। তবে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে ভারতে পৌঁছেছেন তারা। ব্লকবাস্টার এ ম্যাচকে ঘিরে স্টেডিয়াম এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে রেখেছে ১১ হাজার পুলিশ সদস্য।