নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে এবার ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, সেই সাথে মূলস্ফিতি কমবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। যেটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।

গত ৩ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। গত এপ্রিলে বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। গত সেপ্টেম্বরে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

মরক্কোর মারাকাশ শহরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে আইএমএফের ‘গ্লোবাল ইকনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনে বিশ্বের ১৯০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি খাত ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক বা মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

১২ মাসের গড় হিসাবে (২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে নীতি সুদহার ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়নোসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার। তার আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

আইএমএফ প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যে ঘাটতি অব্যাহত থাকবে।

আইএমএফ প্রতিবেদনে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিশ্ব অর্থনীতি। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানি বাজার বিঘ্নিত হয়েছে; সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে নীতি সুদহার অভূতপূর্ব হারে বাড়ানো হয়েছে—এসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি।

আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতির হার অভূতপূর্ব উচ্চতায় উঠে গেলে গত বছরের শেষ বিশ্ব অর্থনীতির কার্যক্রম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে, যদিও মূল্যস্ফীতির হার ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে।

আইএমএফ বলেছে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক মন্দা হওয়ার আশঙ্কা নেই। অর্থনীতির বিশেষ ক্ষতি না করে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রেকর্ড হারে নীতি সুদহার বাড়ালেও বেকারত্ব তেমন একটা বাড়বে না বলেই পূর্বাভাস।